উজানের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ উত্তরের সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। তিস্তা নদীর ২ পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কুড়িগ্রামের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের কবলে পড়েছ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১২.৫ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুরের বানিয়াপাড়ায় গত এক সপ্তাহে ১২টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে।

ধরলা নদীর ভাঙনে গত চার দিনে সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের শিতাইঝাড় গ্রামের ৩৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েক একর আবাদি জমি। আর নদীভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নটির শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

মোগবাসার ইউনিয়নের ভাঙনের শিকার জোসনা বেগম বলেন, চার দিন আগোত আমার বাড়ি ধরলা নদীর পেটোত গেইছে। মানষের (অন্যের) জায়গায়াত কোনো রকম ঘরকোনা তুলছি। সেডাইও (সেখানেও) নদী আসছে। কোন বেলা (কখন যেন) ওই ঘরটাও ভাঙি যায়। হামার স্বামী দিন করে দিন খায়, কোনো জমিজমা নাই। কোনডাই (কোথায়) যামো কি করমো চিন্তায় বাঁচি না।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় চর যাত্রাপুর বেড়িবাঁধ ও যাত্রাপুর বাজার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে নদীভাঙনের শিকার গাইবান্ধার হরিপুর ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে শতাধিক বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানকার অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। তাদের দেখার যেন কেউ নেই।

ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাধুয়া এলাকার মঞ্জু মিয়া বলেন, ভিটেমাটি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখনো ভাঙন অব্যাহত আছে এখানে। কেউ আমাদের দেখতে আসে না। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারি না।

হ‌রিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, বড়সাধুয়া থেকে কাশিমবাজার পর্যন্ত সড়কটি তীব্র ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে এখানকার শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মারুফ জানান, হরিপুর ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের দ্রুত সহায়তা করা হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভাঙন রোধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ