গেলে আসেন, নইলে সরেন
‘গেলে আসেন, নইলে সরেন’। তেলের দাম বাড়ছে, তাই ভাড়াও বাড়ছে। শনিবার (৬ আগস্ট) খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের এমন কথা বলতে শোনা যায়। এমনকি অনেক যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডাও করতে দেখা যায়।
খুলনা থেকে প্রতিটি রুটেই এই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই বাস ভাড়া বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। এটা অন্যায় ও রাহাজানি বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
বিজ্ঞাপন
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ৮০ টাকার ডিজেল ১১৪ টাকা, ৮৬ টাকার পেট্রোল ১৩০ টাকা ও ৮৯ টাকার অকটেন ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন পাম্প মালিকরা। রাত ১০টার দিকে ঘোষণা দেওয়ার পর পাম্পগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। অনেক তেলের পাম্প বন্ধ করে দিতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন : জ্বলছে জ্বালানি তেল
বিজ্ঞাপন
সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প পরিসরে বাস চলাচল করছে। ফলে যাত্রীদের চাপও অনেক বেশি। বিভিন্ন কাউন্টারে যাত্রীদের বেশ ভিড়। সেখানে ভাড়া নিয়ে কাউন্টারের লোকজন ও যাত্রীদের বাগবিতণ্ডাও করতে দেখা যায়।
বাস কাউন্টারে লোকজন ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খুলনা-যশোর রুটে পূর্বের ১০০ টার ভাড়া বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩২০ টাকা। যেখানে আগে নিত ২৮০ টাকা। ঝিনাইদহ রুটে ২২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। খুলনা-পাইকগাছা রুটে ১১৫ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে ভাড়া বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
খুলনা থেকে গড়াই পরিবহনের টিকিট কেটেছেন তুফান নামে এক যুবক। তিনি ঝিনাইদহে যাবেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে, তারা বলছেন, তেলের দাম বেড়েছে, তাই ভাড়াও বেড়েছে। আজ সকালে আমি ঝিনাইদহ থেকে ১৮০ টাকায় খুলনায় এসেছি। অথচ এখন ভাড়া নিয়েছে ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন : পরিবহন নৈরাজ্য!
যশোরের যাত্রী স্বপন বলেন, ১০০ টাকায় খুলনা-যশোর যাতায়াত করি। কিন্তু কাউন্টারে এসে শনি ভাড়া ১২০ টাকা করে। তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
পাইকগাছা কাউন্টারের আব্দুল আহাদ বলেন, ১১৫ টাকা আগে ভাড়া ছিল। তেলের দাম বাড়ার কারণে এখন ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আরও বাড়তে পারে।
ফাল্গুনী পরিবহনের যাত্রী সাইফুল বলেন, সায়েদাবাদ যাব। টিকিট ৬৮০ টাকা নিয়েছে। ভাড়া বেড়েছে।
খুলনা-মোংলা রুটের মায়ের দোয়া পরিবহনের হেলপার মাসুম বলেন, মোংলায় ১২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আগে ছিল ৯০ টাকা। তেলের দাম বেড়েছে, তাই খরচও বেড়েছে। এ জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় প্রচেষ্টা পরিবহনের ভাড়া ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একই অবস্থা টুঙ্গিপাড়া ও ফাল্গুনী পরিবহনের।
আরও পড়ুন : গণপরিবহন কি জনভোগান্তির অপর নাম?
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের রায়হান বলেন, খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার ভাড়া ননএসি ৭০০ টাকা, এসি ৮০০ টাকা আর বিজনেস ক্লাস ১ হাজার টাকা। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাড়া ১০০ টাকা বেড়েছে।
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই রাতে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিজেল যেখানে ৮০ টাকা লিটার ছিল, সেখানে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। লিটারে ৩৪ টাকা বেড়েছে। ফলে বাস চলাচলে ব্যয়ও বেড়েছে।
ফলে ভাড়া নির্ধারণ না হওয়ায় আজ আংশিক বাস চলাচল করছে। আর যেগুলো চলছে, স্বাভাবিকভাবে বাস ভাড়াও কিছুটা বাড়িয়েছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে কিলোমিটার অনুযায়ী একটা ভাড়ার হিসাব করেছে বাস মালিকরা। কেন্দ্রীয়ভাবে ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ মিলন/এনএ