নীলফামারীর সৈয়দপুরে পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প সাড়া ফেলেছে। উপজেলার কামার পুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির উঠানে ও পতিত জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাগান। সেখানে পুরোপুরি অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে নানা রঙের শাক-সবজি। সবুজে ঘেরা সবজির বাগান নজর কাড়ছে মানুষের। এটি এখন নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুরে পতিত জমি ও বসতবাড়ির উঠানে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় পুষ্টি বাগান তৈরি হচ্ছে। এ জন্য আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৬০০টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ২৮৬টি বাগান তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তর গ্রাম উল্লেখযোগ্য। এই গ্রামে ৩৫টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।

ব্রহ্মোত্তর গ্রামের কৃষক মোজাফফর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ির সামনে পরে থাকা প্রায় দেড় শতক জায়গায় কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহোযোগিতায় পুষ্টি বাগান করেছি। বাগানে লাউ, বেগুন, শিম, বরবটি, পেঁপে, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, পাটশাক, লালশাক ও সবুজ শাক চাষ করছি। এখন আর আমাদের বাজার থেকে শাক-সবিজ কিনতে হয় না। নিজেদের বাগানে শাক-সবজি জৈব সার দিয়ে চাষ করছি।

ওই গ্রামের আফতাব উদ্দিনের স্ত্রী জোহরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়ির সামনের প্রায় দেড় শতক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল, ময়লা ফেলতাম। গরু-ছাগল বেঁধে রাখতাম দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন ওই জায়গায় অনেক ধরনের শাক-সবজি চাষ করছি। টাটকা সবজি সংগ্রহ করে খেতে পারছি। বাগানটি করে আমার উপকৃত হয়েছি।

রূপা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পারিবারিক পুষ্টি বাগানে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করি না। জৈব সার, মুরগির বিষ্ঠা, মাছের পানি, গুলের পানি উচ্ছিষ্ট সার হিসেবে ব্যবহার করছি। অর্গানিক উপায়ে চাষ করায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে । নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আমরা বাজারে বিক্রি করি। আবার অনেকে বাগানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। তিনি আমাদের বীজ দিয়েছেন। কোথায় কোন বীজ লাগাতে হবে, কীভাবে জাংলা দিতে হবে, সব শিখিয়ে দিয়েছেন।

ব্রহ্মোত্তরপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুর মোস্তফা জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন শুরু হয়। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার দিয়ে পরিকল্পনামাফিক এই বাগান তৈরি করা হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন বাগান মালিক ও এলাকার বাসিন্দারা। বাগানের মালিকরা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাক-সবজি গ্রহণ করতে পারছেন, উৎপাদনে মনোনিবেশ করছেন এবং সংসারের কাজের ফাঁকে কৃষিতে সময় দিতে পারছেন। এটি কৃষি বিভাগের একটি সফলতা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মমতা সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যেন এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। সৈয়দপুরে বাড়ির আঙিনায় পুষ্টি বাগান তৈরি হচ্ছে। কামার পুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তরপাড়া ব্লক এখন নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার বাসিন্দারা এখন নিরাপদ সবজি গ্রহণ করছেন। সরকারিভাবে তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সুবিধাভোগী কৃষকরা শাক-সবজির পাশাপাশি কমলা, পেয়ারা, মাল্টা ও লেবুও উৎপাদন করছেন।

প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতিত জমি ও বসতবাড়ির উঠানে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যাহত জমিতে ১০০টি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত হচ্ছে নিরাপদ শাক-সবজি, মসলা ও মৌসুমি ফল। যা সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আয় বৃদ্ধি করছে সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর