ফরিদপুরে নববধূর জন্য স্বর্ণের আংটি না আনায় মারধরের শিকার হয়েছে বরপক্ষ। এতে বর-কনেপক্ষের ৯ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের হিয়াবলদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ফুলসূতি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ২৫ দিন আগে হিয়াবলদী গ্রামের শামিল শেখের মেয়ে স্বর্ণা আক্তারের (১৯) সঙ্গে একই উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে শাহজাহান শেখের (৩৪) বিয়ে হয়। শুক্রবার নববধূকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন ছিল।   

তিনি বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে ৫০ জনের একটি বহর নিয়ে বরযাত্রী আসে। শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। এরপর নববধূকে সাজানোর কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কনেপক্ষ বরপক্ষের কাছে স্বর্ণের আংটি চান। তখন তারা স্বর্ণের আংটি না দিয়ে একটি গোল্ডপ্লেটের আংটি দেন।

এ নিয়ে দুই পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। পরে বর শাহজাহান শেখকে রশি দিয়ে বাঁধেন কনেপক্ষের লোকজন। এ ঘটনার পর স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুল মাতব্বর এসে বরপক্ষকে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে তারা তাকে মারধর করেন। এরপর হট্টগোল বেধে যায়।

তবে কনের মা সেলিনা বেগম বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে বরপক্ষ আমাদের কাছে ৪ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা দিতে দেরি করলে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিল। এছাড়া মোবাইল ফোনে আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে বর। তাছাড়া ছেলেটি মাদকাসক্ত যা আমরা বিয়ের পর বুঝতে পেয়েছি।

বর শাহজাহান শেখ বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য এক পুরুষের একটি ছবি দেখি। বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হলে তারা জানান, লোকটি তার দুলাভাই। মেয়েটিকে আমার ভালো চরিত্রের মনে হয়নি। তাছাড়া তারা আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। এজন্য এ বিয়ে থেকে আমার মন উঠে গিয়েছিল। তারপরও আমরা বিয়ের উদ্দেশে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। এরপর তারা আমাকেসহ আমার সঙ্গের লোকদের পিটিয়েছে। এরপর আর একটা সামাজিক সম্পর্ক টিকতে পারে না। আমরা বিবাহবিচ্ছেদের বিষয় ভাবছি।

ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, হিয়াবলদী গ্রামের ঘটনাটি একটি তুচ্ছ ব্যাপার থেকে শুরু হয়ে এখন বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। গতকালই ওই বাড়িতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কাজী ডাকা হয়েছে বলে শুনেছি।

নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় ৯ জন আহত হয়েছেন। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪ জন।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত দেখতে পায়। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

জহির হোসেন/এসপি