ঢাকায় প্যান্টের দোকানে কাজ করতেন মো. সুলাইমান খান (৩০)। একদিন সৌদি আরবের খেজুর চাষ নিয়ে একটি ভিডিও দেখেন ইউটিউবে। সেই থেকে আগ্রহ শুরু হয় খেজুর-বাগান করার। তারপর দেশে এসে বাড়ির পাশে ৪ শতাংশ জমিতে প্রথম শুরু করেন খেজুরগাছের চাষ। এখন প্রায় এক একর জমিতে হয়েছে কয়েক হাজার খেজুরের চারা।

মো. সুলাইমান খান শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোটকাচনা গ্রামের দলিল উদ্দিন খানের ছেলে। তার দুই মেয়ে। আটজনের সংসার তাদের। এই বাগানের আয় দিয়ে তিনি নিজের ও সংসারের খরচ মেটান।

জানা যায়, সুলাইমানের খেজুর-বাগানে পাঁচটি জাতের খেজুর রয়েছে, যার মধ্যে আজুয়া, মরিয়ম, বারবি, নাখাল ও সুপারি। এ ছাড়া তিনি আরেকটি নতুন জাতের খেজুরগাছের চাষ করার জন্য চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া তার বাগানে ১ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের খেজুরগাছের চারা রয়েছে। বাগান থেকে বছরে তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই উঠানে দেখা যায় সারি সারি খেজুরের চারা। এগুলো বিভিন্ন দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। বাড়ির পাশেই এক একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে খেজুর-বাগান। সেখানে রয়েছে কয়েক হাজার গাছ। বেশ কয়েকজন যুবক পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

গত পাঁচ বছরে এই বাগান তৈরি করেছেন সোলায়মান। কয়েক বছরের ব্যবধানে ৫০টিও অধিক গাছে এসেছিল খেজুর। কিন্তু পরিপক্ব না থাকায় কেটে ফেলা হয়েছে খেজুরের ছোপা। এখন একটি গাছে রয়েছে খেজুর। দূরদূরান্ত থেকে তার খেজুর-বাগান দেখতে লোকজন আসেন। অনেকে আসেন পরামর্শের জন্য। তিনি তাদের পরামর্শ ও নিজে গিয়ে বাগান করে দিয়ে আসে।

জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সুলাইমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেজুর-বাগান করার প্রথম দুই বছর পর একটি গাছে ফলন আসে। তখন জায়গা কম ছিল। পরে বাড়ির পাশে পুকুর ভরাট করে সেই জায়গায় চারা লাগিয়ে দিই। ৫০টি গাছে ফলন এসেছিল এ বছর। কিন্তু গাছ অপরিপক্ব হওয়ায় তা ছাঁটাই করে দিই। আগামী বছর আশা রাখি ফলন আসবে।

সুলাইমান খান বলেন, খেজুরের বাগান করার পর থেকে ভাবি, আমি আধুনিক কৃষক হব। এই লক্ষ্যে আমার আরও একটি মাল্টা, আপেল, আঙুরসহ বেশ কিছু ফলের বাগান করার চিন্তা করছি। এর জন্য কিছু জমি আমি লিজ নিয়েছি। এই জমিতে আমি বেশ কিছু ১২ মাসের বেগুন, টমেটো ও লাউয়ের চারা লাগিয়েছি।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার কাছে যেসব নতুন উদ্যোক্তা পরামর্শের জন্য আসে, তাদের আমি নিজে গিয়ে বাগান করতে সহযোগিতা করি। পরিচর্যার জন্য নিয়মকানুন শিখিয়ে দিয়ে আসি। তরুণরা পতিত জমিতে চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন সহজে।

স্থানীয় বিল্লাল হোসেন বলেন, সোলায়মান ভাই খেজুর-বাগান নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তিনি ঢাকা থেকে এসে ছোট একটি বাগান দিয়ে শুরু করেন। এখন তা কয়েক শতাংশে পরিণত হয়েছে। তার এখানে কয়েকজন এলাকার যুবক কাজ করছে। আমি তার থেকে তিনটি ছোট খেজুরগাছ নিয়েছিলাম। সেগুলোয় খেজুর হয়েছে। এখন নিজের বাড়ির পাশে খেজুরের বাগান করার কথা ভাবছি।

গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার খেজুরের চাষ দেখে অনেকেই বাগান করার জন্য আমাদের কাছে আসছে। কিন্তু সরকারি কোনো প্রকল্প না থাকায় আমরা তাদের দিতে পারছি না। তবে আমার নিয়মিত সোলায়মানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ ছাড়া যারা আমাদের কাছে চারা লাগানোর নিয়ম বা পরামর্শ চায়, তাদের আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি।

এনএ