শেরপুরে পৃথক ঘটনায় এক দিনে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপ‌জেলায় এসব ঘটনা ঘ‌টে।

নিহতরা হ‌লেন- শেরপুর সদ‌রের চরশেরপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণ এলাকার মোরশেদ মিয়ার মে‌য়ে নববধূ মীম (১৯), ঝিনাইগাতী শালচূড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের মে‌য়ে মাদরাসা ছাত্রী মায়া আক্তার মৌ (১৪), একই উপ‌জেলার উত্তর ধানশাই‌লের চকপাড়া এলাকার শ‌হিদুল্লাহর ছে‌লে ‌দিনমজুর কুতুব উদ্দিন বাবুল (১৮), নকলা উপ‌জেলার দক্ষিণ লয়খার আনারুল ইসলামের স্ত্রী অজুফা বেগম (৩০), একই উপজেলার উরফার হাসনখিলা এলাকার আজগর আলীর মে‌য়ে আছিয়া (১০) এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ রানীগাঁও গ্রামের শামছুল হকের মেয়ে শাহনাজ পারভীন (৪২)।

পু‌লিশ ও স্থানীয় সূ‌ত্রে জানা যায়, দুপু‌রে শে‌রপুর সদ‌রের রামকৃষ্ণ এলাকায় মীম নিজ ঘ‌রের ধরনার সঙ্গে ওড়না পেঁ‌চি‌য়ে ফাঁস নেয়। এ সময় সে দুটি চিরকুট লিখে যায়। সেখানে উল্লেখ করে- তার শ্বশুরবাড়ির কোনো লোকজন যেন মৃত্যুর প‌রে তার মুখ না দেখে। এ ঘটনায় পুলিশকে না জানিয়ে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেয় তার পরিবার। পরে পুলিশ মীমের মরদেহ উদ্ধার ক‌রে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মীম মাদরাসায় পড়ালেখা করতেন।

এ‌দি‌কে ঝিনাইগাতী শালচূড়া এলাকার মাদরাসাছাত্রী মৌ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে নিজ কক্ষে ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের ধরনার সঙ্গে ফাঁস নেয়। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।  

একই উপ‌জেলার উত্তর ধানশাই‌লের চকপাড়া এলাকায় বি‌কে‌লে ‌দিনমজুর বাবুল বাড়ির পেছনে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে ধানের জমিতে সেচ দিতে যায়। এ সময় ছেঁড়া তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান তি‌নি।

অন্যদিকে নকলা উপ‌জেলার দক্ষিণ লয়খা এলাকার অজুফা বেগম দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছি‌লেন। সকা‌লে নিজ শয়নকক্ষে বাঁশের ধরনার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নেয় তিনি। প‌রে পু‌লিশ ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে তার মর‌দেহ উদ্ধার ক‌রে।

একই উপ‌জেলার উরফার হাসনখিলা এলাকার শিশু আছিয়া বিকেল থে‌কে নিখোঁজ হয়। সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৭টার দিকে বাড়ির পুকুরে তাকে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। প‌রে তার মর‌দেহ উদ্ধার করা হয়। সে মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল ব‌লে জানায় পু‌লিশ।

নালিতাবাড়ীতে নিজ ঘরে সিঁধ কেটে ঘুমন্ত স্ত্রী শাহনাজ পারভীনকে (৪২) শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে স্বামী ডাব ব্যবসায়ী জাহের আলী। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।

এক দিনে ৬ জনের মৃত্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সচেতন মহল। এ ব্যাপারে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের শেরপুর জেলায় ইদানিং আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, সড়ক দুর্ঘটনা ও হত্যার মতো ঘটনা বাড়ছে।এসব মৃত্যু কমাতে আমাদের সচেতন হতে হবে। এখন সব মহলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, আমাদের সমাজে সচেতনতার অভাবে বিভিন্ন কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হলে আমাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে হবে।

শেরপুরের অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার মো. হান্নান মিয়া ঘটনার সত্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন, এ বিষ‌য়ে নিজ নিজ থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা মানুষের মধ্যে ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ঘন ঘন মিটিং করব। মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এসপি