রুবেল শেখের বয়স মাত্র ১৩ বছর। পাড়ার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধুমপান করা শুরু করে সে। এরপর ধীরে ধীরে ধুমপানের সঙ্গে যোগ হয় গাঁজাসহ ভয়ঙ্কর সব মাদক। সেখান থেকে রুবেল মাদকাসক্ত। এ কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি সে। রুবেলের পরিবার তাকে চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এলেও বড় হওয়ার স্বপ্ন যেন মাঝপথে থেমে গেছে তার। 

এলাকার মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের থেকে মাদক সেবন শিখে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে আফজাল হোসেন। ভেঙে যায় নব-বিবাহিত সংসার। দীর্ঘ ১৫ বছর নেশায় আসক্ত হয়ে পরিবার সমাজ থেকে দূরে ছিলেন। তবে মাদককে না বলে আজ তিনি ফিরতে পেরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। 

রুবেল, আফজালের মতো যশোরের রুবায়েত, জুবায়ের, নাসিরসহ অনেকেই মাদকের অন্ধকার জগৎ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আবারও নতুন করে পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

একইভাবে গত ১০ বছরে সহস্রাধিক মাদকসেবীকে চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছে যশোরের ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (আমিক)। পরিবারের সহায়তায় রিকভারি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের ম্যানেজার আমিরুজ্জামান।

শনিবার (২০ আগস্ট) যশোরে চিকিৎসারত মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক পারিবারিক সভায় তিনি বলেন, ছয় মাস চিকিৎসা শেষে মাদকমুক্ত জীবনযাত্রায় পরিবারের বিশেষ ভূমিকা থাকে। চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের সচেনতায় গত এক দশকে তারা এক হাজার ৭২ জনকে মাদকমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন। এজন্য প্রতি মাসে তারা পারিবারিক সভার আয়োজন করেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রেহেনাওয়াজ। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত চিকিৎসায় পরিবারের ভূমিকা সব থেকে বেশি। চিকিৎসা কেন্দ্রে একজন রোগী একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকেন, তারপরে সে তার পরিবারে ফিরে যায়। সেখানে যদি রোগী ভালো পরিবেশ ফিরে না পায় তাহলে তার রিকভারি জার্নি দীর্ঘ হয় না। তাছাড়া যারা সমাজে এখন মাদকে আসক্ত বা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। 

সভায় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন আমিক যশোর সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফুজ্জামান মারুফ। আলোচনা করেন যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, কাউন্সেলর মাসুদ রানা ও প্রোগ্রামার হাফিজুর রহমান।

এমএএস