‘খুন করে গুমের’ ৩৬ দিন পর জীবিত উদ্ধার নূর ইসলাম
নূর ইসলাম
ফরিদপুরের সালথায় ৩৫ দিন আগে অপহরণের পর ‘খুন করে লাশ গুম’ হওয়া নূর ইসলাম চৌধুরীকে (৪২) জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাতে বগুড়া সদর থেকে তাকে উদ্ধার করে সালথা থানা পুলিশ। রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রাম থেকে ‘গুম’ হয় নূর ইসলাম চৌধুরী। এ ঘটনায় ২৭ জুলাই স্থানীয় ১৪ জনের বিরুদ্ধে ফরিদপুর আদালতে একটি মামলা করেন তার স্ত্রী আন্না বেগম (৩৫)।
বিজ্ঞাপন
আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সালথা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। থানা থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেনকে।
এ মামলার আসামিরা হলেন- রাঙ্গারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর, সানোয়ার মাতুব্বর, মুনছুর মুন্সী, হাবিব শেখ, আনিছ শেখ, হাসান শেখ, বাবলু মোল্লা, রাকিব শেখ, দবির শেখ, কবির শেখ, ইসমাইল মোল্লা, হেলাল শেখ ও হেমায়েত শেখ।
বিজ্ঞাপন
নূর ইসলামের স্ত্রী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামী একজন দরিদ্র কৃষক। উল্লেখিত আসামিদের সঙ্গে জমিজমা ও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কিছু দিন আগে গাছ কাটা নিয়ে মামলার এক আসামি আনিছ শেখের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে তার স্বামী স্থানীয় স্লুইচ গেট বাজারে চা খেতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আমি (আন্না বেগম) ও আমার সন্তান যখন স্বামীর অপেক্ষায় রয়েছি, তখন মামলার আসামি ছিদ্দিক মাতুব্বর বাড়িতে এসে আমার শ্বশুরকে বলেন, তোমার ছেলের লাশ রাঙ্গারদিয়া কুমার নদে ভাসছে, যাও গিয়ে লাশ নিয়ে আসো। পরে নদীর পাড়ে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে বাড়িতে চলে আসি। পর দিন (১৫ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে আমার (আন্নার) ছেলে তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকে একটি ভিডিও পোস্ট দেখে। সেখানে দেখা যায়, আসামিরা আমার স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করছে। এতে আমরা সন্দেহ ও আশঙ্কা করছি যে, আমার স্বামীকে অপহরণের পর খুন করে তার লাশ গুম করে রেখেছেন আসামিরা।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্ত শুরু করার পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশ কিছু গুরুপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই নূর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, তদন্ত করে আমি যেটা পেয়েছি তা হলো- মামলার আসামিদের একজনের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া ছিল নূর ইসলামের। ঘটনার রাতে ওই আসামির স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত অবস্থায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নূর ইসলাম। এরপর পরিবারের পরামর্শে নূর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পর দিন নূর ইসলাম বগুড়া সদরে গিয়ে তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি আফরিন জুট মিলে চাকরি নেন। পরে গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাতে সদরে অবস্থিত আফরিন জুট মিল থেকে বগুড়া পুলিশের সহায়তায় এবং শ্যালকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নূর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। গত ১ আগস্ট থেকে ওই মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন নূর ইসলাম।
সালথা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, নূর ইসলামকে লুকিয়ে রেখে তার স্ত্রী মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা তাকে জীবত উদ্ধার করে শনিবার (২০ আগস্ট) আদালতে পাঠাই। আদালত তার পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। এখন আমরা নূর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগমকে খুঁজছি। মিথ্যা মামলা দেওয়ায় তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
জহির হোসেন/আরএআর