মাজেদা বেগমের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। বসবাস করছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মধ্য ঝাউদি এলাকায়। 

জানা গেছে, মাজেদা বেগমের স্বামী হাফেজ মুন্সী দীর্ঘ ২০ বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন। স্বামীর চিকিৎসায় ফসলি জমিসহ নিজের বসতবাড়িও বিক্রি করেছিলেন। তারপরও বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। এরপর শুরু হয় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবন। 

স্বামীর মৃত্যুর পর হাল ধরতে হয় সংসারের। শহরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় মাজেদার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে এক ছেলে আর তিন মেয়েকে বড় করে তোলেন। এর মধ্যে বিয়ে দিয়েছেন এক মেয়েকে। এখনো মাথার ওপর বিবাহযোগ্য দুই মেয়ে রয়েছে। এ চিন্তায় তার ঘুম আসে না। আবার বয়সের ভার আর রোগে ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। এক দিন কাজে গেলে, তিন দিন বিছানায় পড়ে থাকেন। ছেলে কোনোমতে উপার্জন করে সংসার চালায়। তবে মাজেদা বেগমের চাওয়া সরকার তাকে একটা ঘর দিক, তাহলে স্বামীর ভিটায় থাকতে পারবেন।

মাজেদা বেগম বলেন, ঘর না থাকায় মেয়েদের বিয়ের তেমন কোনো সম্বন্ধ আসে না। সরকার যদি আমাকে একটা ঘর দেয়, তাহলে আমি আমার মেয়ে দুটোকে বিয়ে দিতে পারব। মেয়ে দেখতে আসলেই পাত্রপক্ষ বলে মেয়েদের ঘর-বাড়ি নেই। এই মেয়ে নেওয়া যাবে না। এসব কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

মাজেদা বেগমের ছেলে মাসুদ মুন্সী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০ বছর আগে বাবা ক্যানসারে মারা গেছেন। তখন আমরা ছোট ছিলাম। আমার মা বাড়ি-বাড়ি কাজ করে আমাদের বড় করেছেন। বাপের চিকিৎসার জন্য বসতবাড়িটা বিক্রি করতে হয়েছিল। এখন আমাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। সরকার যদি আমাদের একটি ঘর দেয়, তাহলে আমরা সেখানে ঘর তুলে থাকতে পারব।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসিদা বেগম বলেন, দীর্ঘ দিন হয়েছে মাজেদার জামাই মারা গেছেন। আমরা নিজ চোখে দেখছি টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। তারপরও কোনো উপায় না পেয়ে বাড়িটুকু বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা করেছে। এখন অন্যের বাড়িতে থাকে অনেক কষ্ট করে। তার দুটি মেয়ে আছে। ঘর না থাকার কারণে কোনো সম্বন্ধ আসে না। সরকার যদি তারে একটা ঘর দেয়, তাহলে সে তার জমিতে ঘর উঠাতে পারতেন।  

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মফেজ মুন্সী বলেন, মাজেদার স্বামী যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তখন আমরা স্থানীয়ভাবে তাকে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, আমরা কীভাবে তাকে সাহায্য করব? তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, তিনি যেন মাজেদাকে একটা ঘর দেন। 

৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেছার মুন্সি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক বছর হলো মাজেদার স্বামী ক্যানসারে মারা গেছেন। স্বামীর চিকিৎসার জন্য বসতঘর বিক্রি করতে হয়েছিল। তার জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই। সে ঘরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে, আমি তার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব। 

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাজেদা বেগম আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। তিনি যদি ঘর পাওয়ার যোগ্য হন, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই তাকে ঘর দেওয়া হবে।
 
এসপি