ক্যানসারে আক্রান্ত সাত বছরের ছেলের পাশে বসে কাঁদছেন মা হাসনা বেগম

বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা ফরহাদ হোসেনের। সারাদিন খেলাধুলা, দুষ্টুমি শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে বাবার বকুনি-পিটুনির ভয়ে মায়ের শাড়ির আঁচলে লুকানোর কথা তার। কিন্তু মরণব্যাধি ক্যানসার থামিয়ে দিয়েছে সব; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাতরাচ্ছে সাত বছরের ফরহাদ।

একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব দিনমজুর বাবা। অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেমে যাওয়ায় হাসপাতালে ছেলের পাশে বসে কাঁদছেন মা। ভাইয়ের জন্য অশ্রু ঝরে বোনের চোখে। এ অবস্থায় ফরহাদের চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছে পরিবার।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ইসামতি শাহপাড়া গ্রামের দিনমজুর মুছা হকের ছেলে ফরহাদ। মুছা হকের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ফরহাদ সবার ছোট। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ফরহাদের ক্লাসে যাওয়া হয়নি। এক বছর ধরে ফরহাদ চিকিৎসাধীন।

জমিজমা বিক্রি ও ধার করে ইতোমধ্যে ফরহাদের চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করেছেন বাবা। এখন তিনি নিঃস্ব। টাকার অভাবে থেমে গেছে ফরহাদের চিকিৎসা।

স্বজনেরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জ্বরে আক্রান্ত হয় ফরহাদ। এ অবস্থায় গলার বাঁ পাশে ফোঁড়া দেখা দেয়। তখন তাকে দিনাজপুরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ না হওয়ায় রংপুরের পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরহাদের গলায় ক্যানসার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। পরে রংপুর থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

ফরহাদ হোসেনের পাশে বসে আছেন মা হাসনা বেগম

ফরহাদের মা হাসনা বেগম বলেন, ফরহাদ আমার একমাত্র ছেলে। ছেলের চিকিৎসার জন্য সবকিছু শেষ করে দিলাম। এখন আমরা নিঃস্ব। খরচ করার মতো কিছুই নেই।

তিনি বলেন, ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে চিকিৎসা চালাই। উপায় না পেয়ে বাড়ির জমি বিক্রি করে দিই। পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা নিই। তাকে কেমোথেরাপি দিতে হয়। কিন্তু টাকার অভাবে কয়েক মাস ধরে কেমোথেরাপি বন্ধ। চার লাখ টাকা দরকার। কিন্তু আমাদের হাতে আছে ৮০ হাজার টাকা। বাকি টাকার জন্য চিকিৎসা থেমে আছে। টাকার অভাবে চোখের সামনে ছেলেটা মরতে বসেছে। গরিব বলে ছেলের জন্য কিছুই করতে পারছি না।

আমার স্বামী দিনমজুর। ছেলের চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে কিছু অর্থ ভিক্ষা চাই।

হাসনা বেগম, ক্যানসার আক্রান্ত ফরহাদ হোসেনের মা

ফরহাদের বাবা মুছা হক বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার যা ছিল, সবকিছু ছেলের চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দিয়েছি। এতেও কাজ না হওয়ায় অনেক টাকা ধার করেছি। এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখন আমার কিছুই নেই। তাই ছেলের চিকিৎসার জন্য সবার সাহায্য চাই। দয়া করে ছেলেটাকে বাঁচান।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফরহাদের বড় বোন ফারজানা বলেন, ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারি না। তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। চিকিৎসার খরচের জন্য কার কাছে যাব, কি করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। পারলে কেউ আমাদের সহায়তা করুন; আমরা আজীবন ঋণী থাকব।

ইসামতি শাহপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ফরহাদ আমাদের শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাই। তার পরিবার দরিদ্র। বিত্তবানদের সহযোগিতা ছাড়া ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না ফরহাদের বাবার।

আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. হাসান বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্পদ যা ছিল, সব বিক্রি করে দিয়েছেন মুছা হক। আমরাও কিছু সাহায্য করেছিলাম। এখনো তার ছেলের চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাকে সহায়তা করতে বিত্তবানদের অনুরোধ জানাই।

আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, মুছা হক গরিব মানুষ। তার ছেলের চিকিৎসার জন্য আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু সহযোগিতা করেছিলাম, যা খবুই কম। যদি বিত্তবানরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে মুছা হকের একমাত্র ছেলে বেঁচে যাবে। আমি বিত্তবানদের বিনয়ের সঙ্গে বলছি, ছেলেটার পাশে দাঁড়ান।

সাহায্য পাঠাতে চাইলে ফরহাদের মা হাসনা বেগমের ০১৭৬২৮৫৬৮২৯ এই নম্বরে যোগাযোগ করুন।

এএম