নামাজরত মেয়েকে গলাকেটে হত্যা করলেন মা
ফাইল ফটো
রংপুরের বদরগঞ্জে মাদ্রাসাপড়ুয়া মেয়ে মেরিকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন মা নূর নাহার বেগম। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারায় নামাজ পড়া অবস্থায় পেছন থেকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বদরগঞ্জ আমলি আদালত-৪ এর বিচারক আল-মেহবুব তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
বিজ্ঞাপন
মাহবুবা আক্তার মেরি বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক হাজিপুর গাছুয়াপাড়ার মেনহাজুল হকের মেয়ে। তিনি রামনাথপুর বি ইউ দাখিল মাদ্রাসার সুপারিটেনডেন্ট। এর আগে গত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ওয়ারেসিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার মেরির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বদরগঞ্জ থানা পুলিশ ছাড়াও সিআইডির ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত হিসেবে ওই ঘর থেকে রক্তাক্ত একটি চাকু উদ্ধার করে। এসময় মেরির গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক পোচের দাগ থাকা, পরিবারের পক্ষ থেকে যথাসময়ে থানায় খবর না দেওয়াসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে না পারার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্ট শেষে মৃত্যুর রহস্য জানতে রাতেই মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে এ ঘটনায় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে মেরির বাবা মেনহাজুল হক ও মা নূরনাহার বেগমকে আটক করে পুলিশ। এরপর দুপুরের দিকে মেরির চাচা জিয়াউর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মেয়ের হত্যার দায় স্বীকার করেন নূরনাহার বেগম।
তবে ঘটনার দিন শুক্রবার রাতে মেয়ের মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করে নূরনাহার। তিনি সাংবাদিক ও পুলিশকে বলেছিলেন, শোয়ার ঘরে মেয়ের চিৎকার শুনে সেখানে গিয়ে দেখি গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে যায়। আমার মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মৃগিরোগে ভুগছিল। রোগ সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে।
তবে শনিবার আদালতে হত্যার নেপথ্যের কথা জানান নূর নাহার। এ ব্যাপারে আদালতের জিআরও আব্দুল লতিফ জানান, নূর নাহার বেগম আদালতে স্বীকার করেছেন, মেরি যখন এশার নামাজ পড়ছিল, তখন তিনি পেছন থেকে এসে গলায় ছুরি মারেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী বলেন, মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে মৃগিরোগে ভুগছিল। অনেকের ধারণা পারিবারিক অশান্তির কারণে তাকে কৌশলে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিখুঁতভাবে তদন্ত করছি।
বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় মেরির বাবা ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েকে গলাকেটে হত্যার কথা স্বীকার করেন নূরনাহার বেগম। তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস