ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে প্রথমে পুলিশ ও পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে ফরিদপুর শহরের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্বাধীনতা চত্বরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সমবেত হতে থাকেন। তবে শুরু থেকেই কোর্টপাড়া সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে পুলিশ ছিল মারমুখী। পুলিশ প্রথমে ওই এলাকায় কাউকে জড়ো হতে দেয়নি। এ সময় বিএনপির কয়েকজনকে গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। একপর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর ইট ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ লাটিপেটা করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বিএনপি নেতৃবৃন্দ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সীমিত আকারে স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশ করার উদ্যোগ নেন। 

সেখানে প্রথমে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া। পরে বক্তব্য দিতে শুরু করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। ওই সময় মঞ্চে ছিলেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল।

মোদারেরছ আলীর বক্তব্য চলাকালে বিকেল ৪টার দিকে শহরের মেডিকেল অ্যাসিসটেন্স স্কুলের সামনে মুজিব সড়ক হয়ে জাস্ট্রিস ইব্রাহিম সড়ক দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীরা মোটরসাইকেলে করে হাতে কাঠের লাঠি, হকিস্টিক ও লোহার পাইপ নিয়ে সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। ওই সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দৌড়ে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ঢুকে যায়। হামালাকারীরা প্রথমে আইনজীবী ভবনের দিকে ইট ছুড়ে মারে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আইনজীবী সমিতি ভবনে ঢুকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে আহত করে। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও  ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এ হামলায় কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী, সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ভূঁইয়াসহ অন্তত ২৭ জন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে আহত নেতৃবৃন্দকে রেজোয়ান মোল্লা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, হামলায় বিএনপি কর্মী আল আমিন, রিতুসহ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের শহরের  বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত হয়ে নেতৃবৃন্দ যখন আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থান করছিলেন তখন অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়েবা ইউসুফসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবী ভবনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রথমে জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলে মিছিল না করে সমাবেশ এবং জায়গা পরিবর্তন করে স্বাধীনতা চত্বর করা হয়। সেখানেও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা করে পুলিশের সামনে  নির্বিচারে লাটিপেটা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আহত করে।

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা। এতে আমিসহ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় ছিল। স্বাধীনতা চত্বরে বিএনপির লোকজন আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থান নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ইট ও পাথর ছুড়ে মারে। এতে আমাদের সাত-আটজন কর্মী আহত হয়। এ খবর শুনে আমি স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে সকলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি মিছিল করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। সমাবেশ করতে চাইলে ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা তা না মেনে কোর্ট চত্বরে (স্বাধীনতা চত্বর) সমাবেশ শুরু করে। এটি দেখে আওয়ামী লীগও কোর্ট চত্বরে সমাবেশ করতে আসে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জহির হোসেন/আরএআর