মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাগেশ্বর গ্রামের ইট-পাথর দিয়ে নির্মিত কংক্রিটের সেতুর মেঝেতে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। সদর উপজেলার রজতরেখা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হওয়া খালের ওপর বাগেশ্বর গ্রামের বাজারের পাশে ২৫ বছর আগে সেতুটি  নির্মাণ করা হয়।

বাগেশ্বর বাজার থেকে বাগেশ্বর ফকির বাড়ি সংযোগ সড়কের ওপর নির্মিত সেতুটি দিয়ে বাগেশ্বর, মহেশপুর, শেখেরকান্দি, হোগলাকান্দি, নমুনাকান্দিসহ আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। পাঁচ বছর যাবত সেতুটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই পথে যাতায়াতকারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির পশ্চিম পাশে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সেতুর ওই স্থানে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া সেতুর মাঝেও গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সেতুর রেলিংয়ের কয়েক জায়গা ভেঙে গেছে। কিছু স্থানে রেলিং থাকলেও রেলিংয়ের ওপরের আস্তর খসে পড়ে রড বের হয়ে রয়েছে। সেতুটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।  

স্থানীয়ারা বলেন, নদীর স্বচ্ছ বালু ব্যবহার না করে স্থানীয় বালু দিয়ে সেতুটির ঢালাই কাজ করেন ঠিকাদার। নিম্নমানের বালু ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরেই সেতুটির বেহাল দশা। সেতুর মধ্যে সৃষ্টি হয় অসংখ্য খানাখন্দের। ৬-৭ মাস আগে আলু তোলার মৌসুমে এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রলিতে আলু পরিবহনের সময় সেতুর পশ্চিম পাশের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। সেতুটির দুই পাশের রেলিং ছাড়া মেঝের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

তারা বলেন, আমরা নিজেদের উদ্যোগে কাঠ ক্রয় করে এনে সেতুর ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে এখন হেঁটে যাতায়াত করছি। আমরা কয়েকবার উপজেলা অফিসে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও তারা সেতুটি সংস্কার করছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জহির উদ্দিন বলেন, উপজেলার বাগেশ্বর এলাকার বালুচর, কান্দা, ডুবচর, দুলার চর বিলের উৎপাদিত ফসল আমাদের বাড়িতে তুলতে হয় এই সেতুর ওপর দিয়ে। এই সমস্ত বিলে হাজার হাজার মণ আলুসহ অন্যান্য ফসল হয়। কিন্তু গত বছর আলু উঠানোর সময় এই সেতুটি ভেঙে যায়। আগামী বছর আলু রোপণ মৌসুমের আগে সেতুটি ঠিক করা না হলে আলু রোপণ ও উত্তোলন করতে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

বাগেশ্বর গ্রামের শাহ আলম বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। আগে এই সেতুর ওপর দিয়ে আমরা আমাদের জমিতে উৎপাদিত আলুসহ অন্যান্য ফসল পরিবহন করতে পারলেও এখন সেতুর এক পাশে রেখে তারপর মাথায় করে অন্য পাশে নিয়ে পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন শেখ বলেন, সেতুটির পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ২৫ বছর আগের সেতু কখনো সংস্কার না করায় এবং ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করায় সেতুটির এই অবস্থা হয়েছে। মহেশপুর এলাকার শিক্ষার্থীরা পাশের মাখাটি বিদ্যালয়ে এই সেতুটির ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। ভাঙা সেতু দিয়ে পার হতে গিয়ে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শফিকুল আহসান বলেন, সেতুটি আমরা বাস্তবায়ন করিনি। এটা অন্য কোনো সংস্থার হতে পারে, এটা আমি মোটামুটি নিশ্চিত। 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহম্মেদ রেজা আল মামুন বলেন, ওই সেতুটির দুর্দশা সম্পর্কে আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কেউ অবহিত করেনি। আর এই মুহূর্তে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রজেক্ট আমরা দিচ্ছি না। পরে যখন প্রজেক্ট দিব, তখন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। তবে সেতুটি আমরা বাস্তবায়ন করিনি এটা নিশ্চিত।

ব.ম শামীম/আরএআর