যশোর জেনারেল হাসপাতাল/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

হাসপাতালে প্রসবের সময় শিশুর পা ধরে টানাটানি করেন আয়া। একপর্যায়ে নবজাতকের গলার নিচ থেকে বাকি অংশ বেরিয়ে আসে। আর মাথা ছিঁড়ে থেকে যায় পেটের মধ্যে। এ ঘটনায় নবজাতকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ প্রসূতির পরিবারের। শোকে, দুঃখে ও বিকল চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন প্রসূতি আন্না বেগম (২৫)।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে যশোর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে। তবে প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গর্ভে নবজাতকটি মৃত ছিল। তার শরীরে পচন ধরেছিল। ফলে আয়ারা নবজাতকের পা ধরে টান দিতেই মাথা ছিঁড়ে মায়ের পেটের ভেতর থেকে যায়। 

জানা গেছে, প্রসূতি আন্না যশোরের বেনাপোলের গাজীপুরের ইয়াকুব আলীর স্ত্রী। আন্না ও ইয়াকুব দম্পতি প্রথম সন্তানের পিতা-মাতা হতে যাচ্ছিলেন। শুক্রবার রাতে আন্না টয়লেটে পড়ে যান। পরিবারের লোকজন তাকে মধ্যরাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। 

ইয়াকুব আলী জানান, শনিবার সকালে ওয়ার্ডের চিকিৎসক তানজিলা ইয়াসমিন একবার দেখে যান। তিনি নার্সদের রোগীর জরায়ুমুখ খোলার ওষুধ দিতে বলেন। চিকিৎসকের কথামতো আন্নাকে ওষুধ দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আন্নার গর্ভে থাকা শিশুর দুই পা বেরিয়ে আসে। ওয়ার্ডের আয়া মোমেনা ওটিতে নিয়ে আন্নার গর্ভের শিশুর পা ধরে টানাটানি করেন। একপর্যায়ে বাচ্চার গলার নিচ থেকে বাকি অংশ বেরিয়ে আসে। পেটের মধ্যেই থেকে যায় শিশুর মাথা। এ ঘটনায় আন্নাকে ওটিতে ফেলেই পালিয়ে যান আয়া মোমেনা।

আন্নার স্বামী ইয়াকুব আলী ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, প্রথমে ওয়ার্ডের নার্সরা রোগী দেখে জানান নরমাল ডেলিভারি হবে। শনিবার দুপুরে চিকিৎসক তানজিলা ইয়াসমিন এসে চেকআপ করেন। তিনিও নরমাল ডেলিভারির কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর নার্স জানায়, সিজার লাগবে। সিজারের জন্য স্লিপে ওষুধের নাম লিখে দিলেন। ওষুধ আনার জন্য হাসপাতালের একজনকে আমার সঙ্গে দিলেন। আমি তার সঙ্গে না গিয়ে অন্য একটি ফামের্সি থেকে ওষুধ কিনে আনি। কিছুক্ষণ পর নার্সরা জানান- বাচ্চা আর বেঁচে নেই। মায়ের অবস্থাও ভালো না। 

ইয়াকুব বলেন, দ্রুত আমার স্ত্রীর কাছে গেলাম। শুনি মোমেনা আয়া ডেলিভারি করাতে গিয়ে আমার বাচ্চার মাথা ছিঁড়ে ফেলেছে। নার্সরা সবাই পালিয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক তানজিলা ইয়াসমিন বলেন, আয়াদের ত্রুটি ছিল। তবে বাচ্চাটি আগেই মায়ের গর্ভে মারা যায়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলিপ কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি হতবাক হয়েছি। রোববার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। 

জাহিদ হাসান/এইচকে