বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ভ্যানচালক বাবার ছেলে মো. এনামুল হক। এ খবরে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও মুখে হাসি নেই তার। অর্থের অভাবে তার বুয়েটে পড়াশোনা চালানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পড়ালেখার খরচ চলবে কীভাবে সেই দুশ্চিন্তা তাদের। তাই ছেলের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভ্যানচালক বাবা।

অদম্য মেধাবী এনামুল হক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের বেলগাছি গ্রামের ভ্যানচালক ইসরাইল হোসেনের ছেলে। তিনি বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এসএসসি ও এইচএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন এনামুল।

এনামুল হক বলেন, ভ্যানচালক বাবার পক্ষে সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ বহন করা কঠিন। অর্থের অভাবে আমার বড় বোনের পড়াশোনা আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ভাই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আমার বুয়েটে পড়াশোনার খরচ বহন করা বাবার একার পক্ষে অসম্ভব। কী করব বুঝতে পারছি না আমি। পড়ালেখার খরচ চালানোর টাকা আমার পরিবারের নেই। আমার পড়াশোনা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এজন্য সরকার ও দেশের বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

এনামুলের বাবা ইসরাইল হোসেন বলেন, আমার ঘরে জন্ম নেওয়াই যেন ওর অন্যায় হয়ে গেছে। কোনো ধনীর ঘরে জন্ম নিলে ওর জীবনটা এমন হতো না। টাকার অভাবে দিশেহারা এখন আমরা। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য সাহায্য করুন। আপনারা যদি সাহায্য করেন তাহলে ছেলেটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে পারব। তা না হলে আমার কোনো ক্ষমতা নেই তাকে পড়ানোর।

তিনি আরও বলেন, ভ্যান চালিয়ে কীভাবে ছেলেকে বুয়েটে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের জন্য সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে পাশে দাঁড়ানোর আকুল আবেদন জানান তিনি।

মা লিপি খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্থের অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়তে পারিনি কখনো। ভ্যানচালক স্বামীর একার আয়ে সংসারের খরচের চালাতেই হিমসিম খেতে হয়। আমার এনামুল অর্থের অভাবে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে। এনামুল ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।

এই সাফল্যের পেছনে এনামুলের নিজের ইচ্ছা শক্তি আর বাবা-মায়ের উৎসাহের পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগিতা রয়েছে। তবে বুয়েটে লেখাপড়ার খরচ বহন পরিবারের পক্ষে অসম্ভব বলে জানান এনামুল। 

এনামুল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ধার-দেনা করে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোচিং করেছি। বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর গত ২৯ জুলাই ধারদেনা করে ভর্তি হয়েছি। আজ ইউএনও ভর্তি হতে যে টাকা লেগেছিল সেই পরিমাণ টাকা আমাকে দিয়েছেন।

অর্থের অভাবে যেন অদম্য মেধাবী ছেলে এনামুল হকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য সকলের সহায়তা কামনা করেছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী। 

প্রতিবেশীরা বলেন, টাকার অভাবে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে এনামুল। তার বাবা খুব গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এখন তার ছেলে বুয়েট চান্স পেয়েছে। কিন্তু পড়ালেখা চালানোর সামর্থ্য নেই তাদের। বাড়ির জমি বাদে তাদের কোনো জমি নেই। দরিদ্র মেধাবী এনামুলের পাশে সবাই দাঁড়াক, তাকে সহযোগিতা করুক। তাহলে এনামুল তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দীন খান তারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আর্থিকভাবে সাবলম্বী না হওয়ায় এনামুলের ভ্যানচালক বাবা ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন। তারা গরিব মানুষ। পড়াশোনার খরচ তার বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তাই আমি মনে করি, দরিদ্র মেধাবী ছেলেটির পড়াশোনার দায়িত্ব সরকার ও বিত্তবানদের নেওয়া উচিত।  

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুয়েটে চান্স পাওয়া এনামুলের পরিবার দরিদ্র। তার বাবা একজন ভ্যানচালক। বুয়েটে লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। ওই পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদেরও আহ্বান জানাচ্ছি। টাকার অভাবে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হবে না। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।

এনামুলকে কেউ সাহায্য করেতে চাইলে তার ০১৭৭৬৮০৮৪২২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা উল্লিখিত নম্বরে বিকাশ (পার্সোনাল) করতে পারেন।

এসপি/আরএআর