সরকারি নির্দেশনায় দীর্ঘ দিন ধরে বাসা-বাড়িতে নতুন করে পাইপ লাইনের গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযান চালিয়ে বাসা-বাড়ি ও কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়েই গ্রাহকরা এখন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে বাড়ছে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ২ লাখ পিস এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার গ্রাহককে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অবৈধভাবে আরও কয়েক হাজার গ্রাহক বাখারাবাদের গ্যাস ব্যবহার করছেন। তবে এসব অবৈধ সংযোগগুলো প্রায়ই অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করছে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ দিন ধরে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এবং অবৈধভাবে নেওয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের ফলে গ্রাহকরা এখন এলপিজির দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে শহরের বাসা-বাড়িতে লাকড়ি বা স্টোভে রান্না করায় সমস্যা হওয়ায় এলপিজি সিলিন্ডারই এখন ভরসা। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁতেও ব্যবহার হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।

এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় ১৫-১৭টি কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয়। প্রত্যেকটি কেম্পানির একাধিক পরিবেশক আছে। পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে জেলায় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ১ হাজার। মূলত বাসাবাড়িতে ১২ ও ১৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয়। আর ৩০ কেজি ও এর অধিক ওজনের সিলিন্ডারগুলো ব্যবহার করা হয় হোটেল-রেস্তোরাঁতে।

জেলা শহরের হালদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজনীন জাহান জানান, পাইপ লাইনের গ্যাসের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। প্রতি মাসে তার ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার লাগে।

শহরের কাউতলি এলাকার এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মজিবুল ইসলাম জানান, শহরে নতুন নতুন ভবন হওয়ার কারণে সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়ছে। মানুষ এখন এলপিজি সিলিন্ডারের দিকে ঝুঁকছে। এতে করে দোকানে বেচাকেনাও বেড়েছে।

জেলার আখাউড়া উপজেলার ‘মা বাবার দোয়া ভ্যারাইটিজ স্টোর’র স্বত্বাধিকারী কামরুল খাদেম জানান, আখাউড়ায় পাইপ লাইনের গ্যাস না থাকার কারণে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবসা এখন চাঙা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করেন। প্রতি মাসে প্রায় দেড়শ পিস সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারেন এবং মাসে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।

জেলা শহরের কুমারশীল মোড় এলাকার ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফুয়েল কর্ণার’র স্বত্বাধিকারী সুব্রত সাহা জানান, জেলায় প্রতিদিন ৬-৭ হাজার পিস এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা আছে। তার দোকানে প্রতিদিন ৫০-৬০ পিস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। অবৈধ গ্যাস সংযোগ যদি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা যায়, তাহলে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

সেনা এলপিজি সিলিন্ডারের পরিবেশক রিফাত বিন জিয়া বলেন, ‘প্রতিটি কোম্পানির একাধিক পরিবেশক আছে। আবার পরিবেশকদের অধীনে কয়েকজন করে বিক্রেতা আছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ লাখ পিস এলপিজি সিলিন্ডার বেচাকেনা হয়। এর বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। দিন দিন এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়ছে।’

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, ‘অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আমরা যেখানেই অবৈধ পাইপ লাইনে গ্যাস ব্যবহারের খবর পাচ্ছি, সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি।’ 

এসপি