টিউবওয়েল না থাকায় বহুদিন ধরে আবিয়া বেগমের খাবার পানির কষ্ট ছিল। অন্যের বাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবার পানি আনতে হতো তাকে। বিষয়টি স্থানীয় কারও নজরে না এলেও, এসেছে নিউইয়র্ক প্রবাসী প্রিসিলা নাজনীন ফাতেমার। তিনি বিষয়টির সত্যতা জানার পর আবিয়া বেগমকে একটি টিউবওয়েল উপহার দিয়েছেন। আর এই টিউবওয়েল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা আবিয়া বেগম। প্রিসিলার উপহারের মাধ্যমে এতদিনের কষ্ট লাঘব হলো তার।

আবিয়া বেগম (৩৮) অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুর লক্ষীকোল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্বামী সাহেব আলী অনেক আগেই এক কন্যা সন্তান রেখে পালিয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ে সুলতানা খাতুনকে নিয়ে তিনি একাই থাকেন। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এতদিনেও একটি টিউবওয়েল স্থাপন করতে পারেননি তিনি।

আবিয়া বেগমের এমন দুর্দশার চিত্র নিউইয়র্ক প্রবাসী প্রিসিলা ফাতেমাকে ই-মেইলে অবহিত করেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুর লক্ষীকোল গ্রামের যুবক মাহফুজুর রহমান। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। মাহফুজুর রহমানের পাঠানো ই-মেইল বার্তায় সাড়া দেন প্রিসিলা।

মাহফুজুর রহমান জানান, ই-মেইলের মাধ্যমে আবিয়া বেগমের দুর্দশার চিত্র জানানোর পর প্রিসিলা সাড়া দিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও একটি টিউবওয়েল বসানোর জন্য সহায়তা করেন। গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবিয়া বেগম বাড়িতে ৮ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ে টিউবওয়েলটি বসানো হয়েছে।

আবিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসতে খুব কষ্ট হতো। স্বামী অনেক আগেই পালিয়ে গেছে। কোথায় থাকে সেটিও জানি না। একমাত্র মেয়ে সুলতানা খাতুনকে (১৯) নিয়ে আমি থাকি। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে প্রিসিলা নামের মেয়েটি আমাকে টিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছে। এখন থেকে নামাজের জন্য অজু করতে পারব, পানি খেতে পারব। আমি খুব খুশি হয়েছি।

প্রিসিলা নাজনীন ফাতেমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কিছু অসহায় মানুষ আছেন, যাদের কাছে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করার মতো সামর্থ্য নেই। তারা দিনের পর দিন অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে পান করেন। তেমনি আবিয়া বেগম তার বাড়িতে টিউবওয়েল না থাকায় অন্যের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসেন এমন একটি তথ্য আমার ই-মেইলে আসলে আমি দ্রুত তার জন্য একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দেই। আমি চাই এমন মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে।

প্রিসিলা আরও বলেন, আমার এ সামাজিক কর্মকাণ্ড একটি চলমান প্রক্রিয়া। টিউবওয়েল দেওয়ার পাশাপাশি যখনই মানুষের অসহায় জীবনের কথা শুনেছি তখনই চেষ্টা করেছি তাদের জন্য কিছু করার। দোয়া করবেন যেন এ কাজ চালিয়ে যেতে পারি।

প্রসঙ্গত, প্রিসিলা নাজনীন ফাতেমা নিউইয়র্কে বসবাস করেন। তিনি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তার মাধ্যমে দেশে অনেক অসহায় পরিবার টিউবওয়েল থেকে শুরু করে নানাবিধ সহায়তা পেয়েছেন। সমাজের কোনো অসংলগ্নতা তার নজরে এলে সেটা নিয়ে তিনি নেট দুনিয়ায় আলোচনা করে সচেতনতা সৃৃষ্টি করেন।

তাপস কুমার/এমএএস