পাবনা সদর উপজেলায় পাবনা সুগার মিল পুনরায় চালু ও চলতি মৌসুমে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শ্রমিক, কর্মচারী ও আখচাষিরা। আখমাড়াই বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া কালিকাপুর চিনিকলের প্রধান ফটকে পাবনা চিনিকল আখ চাষি সমিতির উদ্যোগে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। পরে আখচাষি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পাবনা চিনিকল দেশের সব কটি চিনিকলের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তিসম্পন্ন। এই চিনিকলের কার্যক্ষমতা গুণ অনেক বেশি। দেশের অন্য সব কটি চিনিকলের চেয়ে এই চিনিকলে আখমাড়াই সবচেয়ে ভালো হয়। ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবছর পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের গুটি কয়েক আমলা ও পরিচালকের ষড়যন্ত্রের কারণে এই চিনিকল বন্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সভাপতি, পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন

বাংলাদেশ চিনিকল আখ চাষি ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বাদশাহর সভাপতিত্বে ও পাবনা চিনিকল আখ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলুর সঞ্চালনায় এ সময় সমাবেশে বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান মিন্টু, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বকুল, পাবনা চিনিকল ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল প্রমুখ। এ সময় সব উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার আখচাষি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

বক্তারা বলেন, পাবনার আখ দিয়ে পাবনা চিনিকল চলবে, অন্য কোনো মিলে আখ দেওয়া হবে না। যতদিন মিলটি চালু না হয়, শ্রমিককর্মচারীরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ চলমান রাখবেন। পাবনায় ৫ হাজার ২০০ একর জমিতে আখ চাষ করেছেন এখানকার কৃষকরা।

রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীরা

পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন ঢাকাপোস্টকে বলেন, পাবনা চিনিকল দেশের সব কটি চিনিকলের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তিসম্পন্ন। এই চিনিকলের কার্যক্ষমতা গুণ অনেক বেশি। দেশের অন্য সব কটি চিনিকলের চেয়ে এই চিনিকলে আখমাড়াই সবচেয়ে ভালো হয়। ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবছর পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের গুটি কয়েক আমলা ও পরিচালকের ষড়যন্ত্রের কারণে এই চিনিকল বন্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পাবনা চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল ঢাকাপোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমের আখমাড়াই শেষে শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি সিদ্ধান্ত নিলে চাষিসহ শ্রমকি-কর্মচারীরা ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তাই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বন্ধ সব চিনিলের আখমাড়াই কার্যক্রম চালুর দাবি জানান এই শ্রমিকনেতা।

তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন চিনিকলে স্থানান্তর করে এই আন্দোলন বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন আন্দোলনকারীরা। পাবনা চিনিকলে আখচাষি রয়েছেন ৬ হাজার ৫০০ আর শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন ৬৫০।

জানা গেছে, ছয় মাস এই মিলের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দেওয়া হয়নি। ৬৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন বাবদ মিলের কাছে ৬ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। ঈশ্বরদীতে প্রায় ৫ হাজার কৃষক এ বছর তাদের জমিতে আখ চাষ করেছেন। এখন কাটার উপযোগী হয়েছে এ আখ। মিলটি বন্ধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজায় ৬০ একর জমিতে পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় পাবনা সুগার মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখমাড়াই মৌসুমে মিলটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।

এনএ