পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান আলো স্বল্পতার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে অভিযান স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সংস্থাটি জানিয়েছে, সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে আবার নদীতে তল্লাশি চলবে। এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনও ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

উদ্ধার অভিযান স্থগিতের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বোদা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাব অফিসার আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, অন্ধকারের জন্য আমরা কিছু দেখতে পারছি না। ঘটনাস্থলে আমাদের একটি টিম আছে। আপাতত উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) ভোর থেকে আবার উদ্ধার কাজ শুরু হবে। আরও দুটি ডুবুরি দল কাজ করবে কাল। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রংপুর থেকে ডুবুরি দল এসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উদ্ধার কাজ শুরু করে। জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ১২ নারী, ৮ শিশু ও ৫ জন পুরুষ। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ১৭ জন ও হাসপাতালে মারা গেছেন ৮ জন।

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনাকবলিত নৌকা দিয়েই চলছে উদ্ধার কাজ

নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত মৃতরা হলেন— বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার হেমন্তের মেয়ে কলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ শালডাঙা হাতিডোবার কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫), কাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দীপঙ্কর চন্দ্র রায় (৩) বোদার মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সজিব চন্দ্র রায়ের মেয়ে প্রিয়ন্তী (২), দেবীগঞ্জের লক্ষ্মীগড় ডাঙাপাড়া এলাকার চন্ডি দাসের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জ পশ্চিম শিকারপুর এলাকার কালি কান্তের ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), রবীন চন্দ্রের স্ত্রী তারা রানী (২৪), বোদার পাঁচপীর বংশীধর পূজারী এলাকার মৃত চুড়ামোহন রায়ের স্ত্রী ধনবালা (৫৭), রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দান দীঘি এলাকার বিলাশ চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৫৫), মাড়েয়া বামনহাট এলাকার রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদার বড়শশী কুমারপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর ছেলে হাছান আলী (৫২), বোদা মাড়েয়া আলোকপাড়া এলাকার রমেশ চন্দ্র ও মিনুতি রানীর শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডুবা এলাকার নারায়ণের শিশু কন্যা তনুশী, বোদার পাচঁপীর মদনহার এলাকার রতন চন্দ্র ও শুতী রানীর শিশু কন্যা শ্রেয়শী, সাকোয়ার গড় দিঘী বাবু বাজার এলাকার ধর্ম নারায়ণের শিশু কন্যা প্রিয়ন্তী, বোদার মাড়েয়া এলাকার রবীন্দ্রের ছেলে বিলাশ চিন্দ্র, বোদা মাড়েয়া বামন হাট এলাকার নির্মল চন্দের স্ত্রী শোভা রানী (২৭) ও খুশি রানী নামে এক নারী। অপর তিন জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, মহালয়া উপলক্ষে দুপুরে বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় মাঝ নদীতে উল্টে যায় নৌকাটি। কয়েকজন সাঁতরে নদীর তীরে আসতে পারলেও ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নৌকায় থাকা অধিকাংশ যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পরে উল্টে যাওয়া সেই নৌকা উদ্ধার করে তীরে রাখেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিস আসার পর আশপাশে কোনো বড় নৌকা না পাওয়ায় দুর্ঘটনাকবলিত সেই নৌকা দিয়েই উদ্ধার কাজ শুরু করে ডুবুরি দল।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, এ জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ নৌকাডুবি এটি। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এছাড়াও বৃষ্টি হওয়ার কারণে নদীতে পানি বেশি ছিল, স্রোতও বেশি ছিল। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথৈ আদিত্যকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবগুলো মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, সৎকারের জন্য পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা ও নিখোঁজদের সন্ধানের উদ্দেশে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্বজনরা তাদের সন্ধানে এসে তথ্য দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এসএসএইচ