পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা ছত্রশিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিন চন্দ্র। পেশায় তিনি একজন ভাটাশ্রমিক। মহালয়া দেখতে তার পরিবার থেকে পাঁচ সদস্য গিয়েছিলেন। তার মধ্যে চারজন নৌকা ডুবে মারা গেছেন, একজন বেঁচে ফিরেছেন। 

নৌকাডুবিতে রবিনের স্ত্রীর সঙ্গে মারা যায় তার তিন বছর বয়সী ছেলে বিষ্ণু রায়। এছাড়া ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্করও (৩) মারা গেছেন।

নির্বাক রবিন চন্দ্র বলেন, সারা দিন কাজ করে টাকা জমাচ্ছিলাম নতুন কাপড় চোপড় কেনার জন্য। সেই টাকা দিয়ে এখন লাশ সৎকার করতে হবে। বাচ্চাটা খুব বায়না ধরেছিল নতুন কাপড় নেবে। আমি বলেছিলাম, মহালয়া শেষ হলে তারপর কিনে দেবো। আমার বাচ্চার আর নতুন কাপড় পরা হলো না। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বেঁচে থাকব আমি? 

প্রাণে বেঁচে আসা দিপু (১৫) বলে, আমরা মহালয়া দেখার জন্য যাচ্ছিলাম। মাঝখানে যাওয়ার পর হঠাৎ করে নৌকা দুলতে থাকে। তারপর আমি নিচে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ কিছুই বুঝতে পারিনি। তারপর সাঁতার কাটালাম। আমি আমার নিজ হাতে তিনটা লাশ উদ্ধার করেছি। আরও কয়েকজনকে বাঁচিয়েছি। বেশি লোক নেওয়ায় নৌকাটা ডুবে যায়। প্রায় একশজনের বেশি লোক আমরা নৌকায় ছিলাম।

দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের আটজনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চারজন রবিনের স্বজন। বিষয়টি আসলে অনেক কষ্টদায়ক। এ নিয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে মাড়েয়া আলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজদের খুঁজতে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ডুবুরি দল।

এসপি