‘আমার রানার কী অপরাধ ছিল? ওরা আমার ছেলেকে বাঁচতে দিলো না। আমার ছেলেকে ওরা পিটাইয়া মাইরা ফালাইছে। আমি খুনিদের ন্যায্য বিচার চাই। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’ চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা রানার মা আর্তনাদ করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তার আর্তনাদে উপস্থিত সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রানা মিয়া (২২) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় রানার বাবা বাদী হয়ে উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের আব্দুল করিমের বড় ছেলে শিপন (২৭) ও ছোট ছেলে আকাশ (২৫), একই গ্রামের মৃত খোকা মেকানিকের ছেলে উজ্জ্বল (৪৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে শওকত (৩০), আবুল কাশেমের ছেলে ইমন (৩০), মৃত ওদর আলী বাইদ্যার ছেলে মোশারফসহ (৫০) অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে রানার বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, রানা মারা যাওয়া আগে অভিযুক্তদের নাম ও নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে। অভিযুক্তরা রানাকে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। পরে চুরির অপবাদ দিয়ে শিপনের ভাঙারি দোকানের সামনের রাস্তায় ফেলে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। রানার মুখে কাগজ গুজে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার বৈদ্যুতিক শক দেয়। এছাড়া পুরুষাঙ্গের ভেতর রড ঢুকিয়ে দেয়। সে চিৎকার শুরু করলে মুখে কাগজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পরে ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ছিদ্র করে ফেলে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বুকের পাজর, দুই হাত, পা ভেঙে দেয়। 

নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। রোববার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে রানার মরদেহ বাড়িতে আনা হলে তাৎক্ষণিক তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। মানববন্ধন থেকে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের পর এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভাঙারি ব্যবসার আড়ালে এলাকায় বড় একটি চোরের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে শিপন। তার এ সিন্ডিকেট আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে চুরি করে থাকে। প্রকাশ্যে রানাকে মারধর করা হলেও তাদের ভয়ে কেউ রানাকে উদ্ধার করতে সাহস পায়নি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রানার খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

রানার মা রেহেনা আকতার বলেন, শনিবার সকাল ৬টার দিকে রানাকে ঘরে পাওয়া যায়নি। এ সময় খবর পাই, ওরা রানাকে মারধর করছে। রানার বাবাকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় শিপনসহ অন্যরা বাধা দিলে তাদের কাছে আকুতি-মিনতি করা হয়। ওদের হাত-পা ধরি। তবুও শিপনের মন গলাতে পারিনি। হঠাৎ শিপনের সঙ্গে তার ভাই আকাশ আমার চুলে মুঠি ধরে মারপিট শুরু করেন। এতে আমার মাথার চুল ছিঁড়ে যায়। আমার স্বামী বাধা দিলে তাকেও মারপিট করা হয়। পরে নানা শর্ত দিয়ে জোর করে একাধিক সাদা কাগজে টিপসই নেয়। 

তিনি আরও বলেন, উদ্ধারের পর পর রানাকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশে রওনা হলেও শিপনের লোকজন আমাদের হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়। পরে স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে রানাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘাতকদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। দ্রুতই ঘাতকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

শিহাব খান/এসপি