নারী যাত্রীকে লাঞ্ছিত, রেলের বুকিং সহকারী বদলি
বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনি
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক নারী যাত্রীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনিকে বদলি করা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার টুটুল চন্দ্র সরকার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি কক্ষে আটকে রেখে এক নারী যাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে চলতি মাসের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনাগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে রেল মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অমান্য করে টিকিট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে।
স্টেশন মাস্টার টুটুল চন্দ্র সরকার বলেন, নারী যাত্রীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনিকে বদলি করা হয়েছে। ওই নোটিশে শুক্রবারের মধ্যে জাহেদুল ইসলাম রনিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশনে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনি ১০ সেপ্টেম্বর একজন যাত্রীকে খুলনাগামী ট্রেনের ছয়টি টিকিট দেন, যা পুরোপুরি বেআইনি। ওই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল, যার ফলে ওই সময় রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক অফিস ওই বুকিং সহকারীকে শোকজ এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল ইসলাম বলেন, গত বুধবার রাতে বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে এক নারী অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে লাঞ্ছনার শিকার হন সৈয়দপুর শহরের এক নারী। তিনি ঢাকায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি ১ অক্টোবর ঢাকাগামী আন্তনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে যান। কিন্তু কাউন্টারের বুকিং সহকারী ওই তারিখের কোনো টিকিট নেই বলে জানিয়ে দেন। তবে তিনি ওই নারী যাত্রীকে কালোবাজারে টিকিট পেতে সৈয়দপুর প্লাজার গ্লোবাল কম্পিউটারের দোকানে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে ছয়টি টিকিটের মূল্য হিসেবে গ্লোবাল কম্পিউটারের মালিক মনোয়ার হোসেন ওই নারী যাত্রীর কাছে থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে একটি স্লিপ দিয়ে আবার স্টেশনের বুকিং সহকারীর কাছে পাঠান বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত দামে টিকিট কেনার বিষয়ে কথা তোলায় সহকারীর সমর্থনকারী কিছু লোক তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে আরও দুজন রেল কর্মচারীর সহযোগিতায় তাকে টেনে-হিঁচড়ে বুকিং সহকারীর কক্ষে আটকে রাখা হয়। এ সময় রেল কর্মচারীসহ চারজন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। দেয়ালের সঙ্গে মাথা চেপে ধরে চড়-থাপ্পড় মারেন তাকে। একপর্যায়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ট্রেনের টিকিট কেড়ে নেন তারা।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর