নির্বাচনী আচারাণবিধি ভেঙে পিকনিকের নামে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আয়েন উদ্দিন।

গতকাল শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নগরীর চৈতির বাগানে আয়োজিত ওই পিকনিকে জেলার সকল উপজেলা ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অংশ নেন। তারা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার।

এমপি আয়েন উদ্দিনের এমন কাণ্ডের সংবাদ শনিবার (০১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নজরে পড়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিলের। পরে তিনি এমপি আয়েন উদ্দিনকে সতর্ক করে চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬–এর বিধি ২(১৪) অনুসারে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে একজন সংসদ সদস্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার চৈতির বাগানে ওই পিকনিকের আয়োজক এমপি আয়েন উদ্দিন নিজেই। পিকনিক স্পটেই মঞ্চ বানানো হয়। 

পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের জেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মো. ডাবলু সরকার, জেলা পরিষদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আসাদুজ্জামান, কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত, পবা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি কিন্তু বলেছিলাম আমাদের বাড়ির মানু, কাছের মানুষ, প্রবীণ মানুষ, তাকে আপনারা একটা করে ভোট দেন। ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কোনো মানুষই নাই। আমরা কাকুতি–মিনতি করেছি। অনেকেই মুখে বলেছে, কিন্তু অন্তরে বলে নাই। ফলশ্রুতিতে পাঁচটা বছর গেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য। আমার তো বরাদ্দ নাই-ই, আমার নেতা-কর্মীরা সেখানে অসম্মানিত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, যার আদর্শ নাই, অন্তর নাই, সেই নির্লজ্জ মানুষকে ভোট দেওয়ার পরে পাঁচটি বছরে অন্তত একজন মানুষ দাঁড়িয়ে বলেন তো, জেলা পরিষদে গিয়ে আমি সম্মানিত হয়েছি। একজন মানুষ বলেন তো, টাকা ছাড়া একটা বরাদ্দ পেয়েছি।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের পক্ষে ভোট চেয়ে আয়েন উদ্দিন বলেন, তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। তিনি জীবন বাজি রেখে এই দেশটা স্বাধীন করেছেন। তার পিতার লাশ পর্যন্ত পাননি। এটি আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন। তার আত্মীয়ের লাশ পর্যন্ত পাননি। এটিও আপনারা শুনেছেন। তারপরে নীরবে নিভৃতে আদর্শ পালন করেছেন। তার চাওয়া-পাওয়া একটাই, এই বাংলাদেশে লাল-সবুজের পতাকা উড়বে। এই বাংলাদেশের মানচিত্র বিশ্বের মানচিত্রে দৃশ্যমান হবে।

মোটরসাইকেল প্রতীকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের অভিযোগ, প্রতীক বরাদ্দের পর রাজশাহীর পবা উপজেলার অধিকাংশ ভোটারকে জোর করে পিননিকের নামে চৈতীর বাগানে উপস্থিত হতে বাধ্য করেছেন এমপি আয়েন উদ্দিন। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। এসব ঘটনা নির্বাচনের আচারণবিধি ভঙ্গের একটি অংশ। 

এ বিষয়ে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, সেখানে (চৈতীর বাগান) আমার সব দলীয় লোকজন এসেছিলেন। আমাকেও সেখানে দাওয়াত করেছিলেন, তাই আমি গিয়েছিলাম। দলীয় লোক তাই আমার মৌন সমর্থন ছিল আর কী, কিন্তু কাউকে জোর করে ভোট দিতে বলি নাই।

এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন আয়েন উদ্দিন। তিনি বলেন, এ রকম একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথ প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বিধি ভেঙে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারে নামায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মনসুর রহমানকেও আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য চিঠি দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর