ভাড়াটিয়ার অপরাধ লুকাতে গিয়ে ফাঁসলেন বাড়িওয়ালা
স্ত্রীকে খুন করে পালিয়েছেন স্বামী। বাড়িওয়ালা সেই লাশ দেখতে পেয়ে ভয়ে কাউকে না জানিয়ে পরিকল্পনা করেন লাশ গুমের। এরপর বস্তায় ভরে নিজের প্রাইভেট কারে তুলে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের আকুয়া-রহমতপুর বাইপাস সড়কের বাদেকল্পা এলাকায় ফেলে দেন। তাসলিমা নামের ওই নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘাতক স্বামী মেহেদি হাসান (২২) ও বাড়িওয়ালা স্বপন ব্যাপারীকে (৩৮)।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় এক প্রেস কনফারেন্সে এ তথ্য জানিয়েছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুল ইসলাম ফকির। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আকুয়া-রহমতপুর বাইপাস সড়কের বাদেকল্পা এলাকা থেকে অজ্ঞাত নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায় নিহতের নাম তাসলিমা। তিনি নান্দাইলের ভাসাটি গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মামলা দায়ের করলে তদন্ত ও অভিযানে নামে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
শাহীনুল ইসলাম জানান, ফুলপুরের গোয়াডাঙ্গা এলাকার মেহেদির সঙ্গে বিয়ে হয় নিহত তাসলিমার। এটি ছিল তাসলিমার তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকে তাসলিমা তার স্বামী মেহেদীকে নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছিলেন। গত ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার স্বামী-স্ত্রী চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকায় স্বপন নামে এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া নেয়। পরের দিন বুধবার রাতে ওই বাসায় স্ত্রী তাসলিমাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় স্বামী মেহেদী।
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির মালিক স্বপন নতুন ভাড়াটিয়া তাসলিমা ও তার স্বামী মেহেদির জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে বাসায় যান। এ সময় দরজার কড়া নেড়ে ভেতরে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কা দেন এবং দরজা খুলে তাসলিমার বস্ত্রহীন লাশ পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যান স্বপন।
বিজ্ঞাপন
ভয়ে পুলিশ কিংবা কাউকে কিছু না জানিয়ে লাশ গুমের পরিকল্পনা শুরু করেন। বৃহস্পতিবার দিনভর ঘর বন্ধ রাখার পর ওই রাতে লাশ বস্তাবন্দি করে স্বপন নিজের প্রাইভেটকারে করে নির্জন স্থানে ফেলে দিতে ময়মনসিংহের দিকে রওনা দেয়। কোথাও সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে অবশেষে আকুয়া-রহমতপুর বাইপাসের বাদেকল্পা এলাকায় লাশ ফেলে পালিয়ে যায় স্বপন ও তার সহযোগীরা।
কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই নিরুপম নাগ ও এসআই মিনহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রোববার রাতভর গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্বামী মেহেদি ও বাড়িওয়ালা স্বপনকে গ্রেপ্তার এবং গুমের উদ্দেশে লাশ বহনকারী প্রাইভেটকারটি জব্দ করে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ ছিল। সেই কলহের জেরেই তাসলিমাকে হত্যা করে তার স্বামী। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজনকে সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উবায়দুল হক/এসপি