উত্তরাঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ নেপালি যুবক
হেঁটে বিশ্বভ্রমণে বের হওয়া ২৭ বছর বয়সী নেপালি যুবক ইহ এখন নীলফামারীতে অবস্থান করছেন। তিনি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর থাপাথালি এলাকার বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণে আগ্রহী ইহ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছাড়েন। এরপর ছেড়েছেন পরিবারও। শখ থেকেই হেঁটে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন এই যুবক।
নেপাল থেকে ভারত, শ্রীলঙ্কা হয়ে পৌঁছেছেন বাংলাদেশে। টেকনাফ থেকে হেঁটে রওনা দিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে। তিনি সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে নীলফামারী শহরে পৌঁছান। রাতে সেখানকার একটি আবাসিক হোটেলে থাকবেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে রোববার (১৬ অক্টোবর) রাত ৯টায় নেপালি যুবক ইহ নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে পৌঁছান। সেখানে নীলফামারী ট্রাফিক পুলিশের কর্মরত সৈয়দপুর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নাহিদ পারভেজ চৌধুরী, স্থানীয় সাংবাদিক ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। ট্রাফিক পুলিশের ওই কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে ইহকে শহরের ইকু হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে থাকার ব্যবস্থা করেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে তার ভ্রমণ সঙ্গী হয়েছেন আলোকচিত্রী ও লেখক হোমায়েদ ইসহাক মুন। তাদের সঙ্গে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকে যুক্ত হয়েছেন ঢাকার ফ্যাশন ডিজাইনার সবুজ কুমার বর্মণ প্রবাল। এর আগে প্রবাল ‘SAY YES FOR WALK, SAY NO FOR THERAPY’ : ‘হাঁটাকে হাঁ বলুন, থেরাপিকে না বলুন’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে থেরাপির পরিবর্তে মানুষকে হাঁটার উপকারিতা বোঝাতে ও সচেতন করতে মাত্র ১৭ দিন হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ১০০ কিলোমিটার পথ মাত্র ১৭ ঘণ্টায় হেঁটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেন তিনি।
আরও পড়ুন : হেঁটেই বাংলাদেশ ভ্রমণ করছেন নেপালি যুবক
নেপালি যুবক ইহ জানান, হেঁটে বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে প্রথমে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র নেপাল হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি। পরে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের কারগিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং সমগ্র ভারত ভ্রমণ করেন। সেখানে এক মাস বিশ্রাম নিয়ে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ শেষে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছান।
১৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে পায়ে হেঁটে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি পাঁচ বছরে তিনটি দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশে ২৯ দিনে ৮৫০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সৈয়দপুরে পৌঁছান। তিনি বাংলাবান্ধা হয়ে নেপাল যাবেন এবং নেপাল থেকে পরবর্তী ভ্রমণের রোডম্যাপ নির্ধারণ করবেন। তবে হেঁটে বিশ্বভ্রমণের পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভ্রমণ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নেপালি এই যুবক আরও জানান, বাংলাদেশে তার মোট ১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ভ্রমণ শেষ হবে। এতে তার চারটি দেশে মোট ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ সম্পন্ন হবে। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন তিনি। নানা দেশের মানুষের সংস্কৃতি জানার আগ্রহ থেকে কাঠমান্ডু থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
ইহ জানান, বাংলাদেশে এসে পথে পথে সবুজ ফসলের মাঠ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। গ্রামের হাটবাজার গুলোতে অনেকেই তাকে দেখে আগ্রহ নিয়ে কথা বলেছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা আবার চা-বিস্কুট খাওয়ার আমন্ত্রণও জানাচ্ছেন। গ্রামের মাঠে কাজ করা কৃষকেরাও তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন। স্থানীয় লোকজনই তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। বাঙালির আতিথেয়তায় তিনি অভিভূত। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তা তাকে মুগ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের ভ্রমণসঙ্গী আলোকচিত্রী ও লেখক হোমায়েদ ইসহাক মুন ওই নেপালি তরুণের বন্ধু। মুন জানান, কয়েক বছর আগে এভারেস্ট পর্বতের বেসক্যাম্পে গিয়ে ইহর সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। হেঁটে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা পাড়ি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে তাকে জানালে, তিনি তার সফর সঙ্গী হন।
সবুজ কুমার বর্মণ প্রবাল বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল তাদের সঙ্গে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত যাওয়ার। কিন্তু অফিসের কাজের চাপ থাকায় একদিনের জন্য তাদের সঙ্গে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে যুক্ত হয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এসে ঢাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর