নড়াইলে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. লাভলু মীরকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে নড়াইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক সানা মো. মাহরুফ হোসাইন এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. লাভলু মীর লোহাগাড়া উপজেলার চর বকজুড়ি গ্রামের লায়েক আলী মীরের ছেলে।

নড়াইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দণ্ডপ্রাপ্ত লাভলু মীর প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে ২০০৭ সালে নিজ উপজেলার মুক্তামণিকে বিয়ে করে। বিয়ের খরচ বাবদ মেয়ের পরিবারের থেকে কৌশলে ৩০ হাজার টাকা আদায় করে। বিয়ের পরে নানা সময়ে যৌতুকের জন্য মুক্তামণিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো তার স্বামী। সংসার চলাকালীন মুক্তামণি মেহরাব নামের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। মুক্তামণির পরিবার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার স্বামীর সব অন্যায় আবদার পূরণের চেষ্টা করে।

সর্বশেষ ২ লাখ দাবি করে মুক্তামণির পরিবারের কাছে। দিতে না পারায় সালিসের মাধ্যমে জোর পূর্বক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। মুক্তামণি তার স্বামী ও ৫ বছরের সন্তান মেহরাবকে ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান।
 
৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মুক্তামণিকে ২০১২ সালের ২১ মে তার স্বামী শারীরিক নির্যাতন চালায় ও শ্বাসরোধ করে হত্য করে। লাভলু মীর স্ত্রীর (মুক্তামণি) লাশ গোপনের উদ্দেশ্যে নিজ ঘরের পেছনে মধুমতি নদীতে ফেলে দেয়। পরক্ষণে লাশ উঠিয়ে পরিবারের কাছে খবর পাঠায় মুক্তামণি পানিতে ঢুবে মারা গেছে। পরের মাসের ৪ তারিখ মুক্তামণির বোন বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নয়জন সাক্ষির স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আজ এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। আদালতে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪ জনকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ শোনার পর আসামি লাভলু মীর অচেতন হয়ে পড়েন। ১ ঘণ্টা পর তাকে সুস্থ করে আদালত থেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

মামলার বাদী মুক্তার বোন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমার গর্ভবতী বোনের হত্যাকারীর ফাঁসি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। 

সজিব রহমান/এমএএস