আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আজ অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এক সময় আমাদের দেশে জারি-সারি, ভাটিয়ালি, লালনের গানের প্রচলন ছিল ব্যাপকভাবে। সেটি আস্তে আস্তে হারিয়ে গেছে। সেই প্রচলন আর নেই। এই হারিয়ে যাওয়ার কারণেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ আস্তে আস্তে  ছড়াচ্ছে। আসুন সবাই লালনের মতবাদে উদ্বুদ্ধ হই। আসুন সবাই লাললের দর্শন নিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ি। 

সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ছেঁউড়িয়ায় লালন আঁখড়াবাড়িতে আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সবাই চিন্তা করে বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে, অর্থ-বিত্তের মালিক হবে। কিন্তু কেউ আদর্শবান মানুষ হওয়ার কথা বলেনি। কিন্তু লালন সেই আদর্শের মানুষ হওয়ার কথা বলেছে। সেটাই লালন বলে গেছেন, যে মানুষের মধ্যে জাতপাত গোত্র নয়। মানুষ মানুষের জন্য, ধর্ম যার যার, আমরা মানুষ হিসেবে সবাই সমান।

তিনি আরও বলেন, মানুষকে তাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মনের আসল মানুষকে বের করে আনতে হবে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে চিন্তাচেতনাকে প্রসার করে সোনার মানুষ হতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপী তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। তিন দিনব্যাপী তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত। 

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে লালন তিরোধান দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. মো. শাহিনুর রহমান। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক রবিউল ইসলাম এবং কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম।

আলোচনা সভা শেষে লালন মঞ্চে শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পীদের অংশগ্রহণে লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান।

আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ডখণ্ড দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। গুরুশিষ্য, ভক্ত-অনুসারী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর লালন মেলা।

প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই মেলা চালিয়ে আসছিল। প্রতি বছর ১ কার্তিক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়। 

রাজু আহমেদ/এসপি