উদ্বোধনের আগেই বেহাল দশা শাবির এফইটি বিভাগের ওয়ার্কশপের
প্রায় দেড় বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনের আগেই জানালা ও গ্রিল ভেঙে বেহাল দশা তৈরি হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এফইটি) বিভাগের নতুন ওয়ার্কশপের। দীর্ঘদিন আগে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অযত্ন এবং অবহেলায় পড়ে আছে ভবনটি।
জানালার কাঁচ ও গ্রিল ভেঙে ভেতরের জিনিসপত্র চুরি হয়ে এ দশার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র হল সৈয়দ মুজতবা আলী হলের পার্শ্ববর্তী টিলার ওপর অবস্থিত এ ওয়ার্কশপটির। টিলার ওপর ভবনটির অবস্থান হওয়ায় বেশি ভাগ সময়ই সেই স্থানটি থাকে নীরব। এ কারণে প্রায়ই সেখানে বসে মাদকসেবিদের আড্ডা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ভবনটির কাজ গত বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়। একই বছরের ১৫ জুন বিভাগের শিক্ষকদের কাছে প্রকৌশল দপ্তর থেকে ভবনটির চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভবনটির কাজ শেষ হলেও এতো দীর্ঘ সময় পরও ভবনটির ব্যবহার শুরু না হওয়ায় সেখানে বসছে মাদকের আড্ডা ও নষ্ট হচ্ছে ভবনটির বিভিন্ন জিনিসপত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মিত নতুন এ ওয়ার্কশপটির সামনের অংশের চারটি জানালার মোট ১৫টি অংশের কাঁচ ভাঙা। ডান পাশের অংশের চারটি জানালার মোট ৮টি অংশের কাঁচ ভাঙা, বাম পাশের অংশের তিনটি জানালার মোট ৪টি অংশের কাঁচ ভাঙা এবং ভবনটির পেছনে চারটি জানালার মোট ১০টি অংশের কাঁচ ভাঙা।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও একটি জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতর থেকে ইলেকট্রিক বিভিন্ন জিনিসপত্রও চুরি হয়ে গেছে। কাঁচ ভেঙে গ্রিলটি বাঁকিয়ে রাখার নমুনাও চোখে পড়ে। ভেতরে সংযুক্ত ওয়াশরুমের অবস্থাও করুণ। এছাড়াও ভবনটির আশেপাশে প্রচুর সিগারেটের প্যাকেট এবং ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়। চারপাশে এবং ভবনটির সামনে আগাছা জন্মে এবং ময়লা জমে একাকার হয়ে আছে। যেন এগুলো দেখার কেউ নেই।
এদিকে টিলার ওপর অবস্থিত এ ওয়ার্কশপটির বারান্দায় প্রায়ই বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় যুবকদের আড্ডা। এখানে বসে সন্ধ্যার পর গাঁজা সেবনরত অবস্থায় কিছুদিন পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডদের সহায়তায় প্রক্টরের হাতে ধরা পড়ে স্থানীয় কিছু যুবকও। ওই সময় সেখানে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকেও সতর্ক করে দেন সেখানে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর।
এদিকে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে এ ওয়ার্কশপে গিয়ে গাঁজা সেবনে বাধা দেওয়ায় গার্ডদের মারধরের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার পর ভবনটির আশেপাশে জন্ম নেওয়া বড় আগাছাগুলোও পরিষ্কার করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু তদারকির অভাবে সেগুলো আবার আগের অবস্থার দিকে ফিরে যাচ্ছে বলে লক্ষ্য করা যায়।
সৈয়দ মুজতবা আলী হলে পূর্বে দায়িত্বরত একাধিক গার্ড জানান, এ ওয়ার্কশপের বারান্দায় বসে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। মাঝে মাঝে এখানে বহিরাগত অনেক যুবকও এসে আড্ডা দেয়। আমরা নিষেধ করলেও তারা আমাদের কথা শোনে না। এখানে যারা আড্ডা দেয় তারাই এ ভবনটির এ অবস্থা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, বিভাগটির পক্ষ থেকে আমাদের যে স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল এবং যে ডিজাইন দেওয়া হয়েছিল সেই অনুযায়ী আমরা কাজ শেষ করে বিভাগের কাছে চাবি বুঝিয়ে দিয়েছি। গত বছরের জুন মাসে আমাদের দপ্তর থেকে বিভাগের কাছে ভবনটির চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বিভাগটি যখনই চাইবে তখনই তারা সেখানে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
বিভাগের কাছে ভবনটির কাজ শেষ করে চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় দেড় বছরের কাছাকাছি সময়। এতদিনেও কেন সেখানে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফইটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জি এম রবিউল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা ছোট বিষয়গুলো নিয়ে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। এসময় তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর প্রতিবেদকের পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র দেখতে চান, তা না হলে প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।
পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রকৌশল দপ্তর থেকে কোনো চাবি বুঝে পাইনি। প্রকৌশল দপ্তর থেকে যা বলা হয়েছে সেটা ভুল। ভবনটি তৈরি করার পর আমরা দরজা জানালাসহ কয়েকটি ত্রুটি পাই, সেগুলো আমরা প্রকৌশল দপ্তরে জানিয়েছি। তাছাড়া আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা ভবনটির চারপাশে ওয়াল তৈরি করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। তাছাড়া সেখানে পর্যাপ্ত সিকিউরিটি নেই। পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছি কিন্তু আমরা কোনো উত্তর পাইনি। এজন্য আমরা সেখানে একাডেমিক কাজ শুরু করতে পারিনি।
এমএএস