রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বিশ্বের সর্বাধুনিক ‌‌এফেরেটিক মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এটি রংপুর বিভাগের আট
জেলার মধ্যে রমেক হাসপাতালে স্থাপিত প্রথম এফেরেটিক মেশিন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ মেশিনের সাহায্যে রক্ত দিতে হবে না। সরাসরি রক্তের এফেরেসিস করে প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীকে দিতে পারবেন দাতা। এছাড়াও রক্তস্বল্পতা জনিত রোগীর বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।

বৃস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে এক রক্তদাতার ‘বি পজিটিভ’ প্লাটিলেট প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে এফেরেটিক মেশিনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. জোবায়দা জান্নাত,
মেডিকেল অফিসার ডা. মুফেক মাহমুদ, এফেরেটিক মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডায়ামেড-এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ফাহাদিন বিন হাকিম ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আমির হোসেন প্রমুখ।

কার্যক্রম শুরুর আগে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে স্থাপিত মেশিনটি পরিদর্শন করেন রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান, উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মোকাদ্দেমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এসময় সরকার থেকে দেওয়া এই মেশিনের সুবিধা রংপুর অঞ্চলের চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী মানুষের ব্যয় সাশ্রয়ী করবেন বলে জানান তারা।

এদিকে সর্বাধুনিক এ মেশিনটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত রোগীকে প্লাটিলেট দেন লালমনিরহাটের বড়বাড়ী এলাকার সাদেকুল ইসলাম।

স্বেচ্ছাসেবী এ তরুণ বলেন, এর আগে আমি সাতবার রক্ত দিয়েছি। কিন্তু প্লাটিলেট দেওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। আমার নতুন একটি অভিজ্ঞতা হলো। সেইসঙ্গে এই মেশিনের মাধ্যমে রমেক হাসপাতালে প্রথম প্লাটিলেটদাতা হতে পেরেছি। এতে আমি খুবই আনন্দিত। আমি চাই আমার মতো তরুণরা এমন ভালো কাজগুলোতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসবে।

রোগীর ছেলে মজিদুল ইসলাম বলেন, আমার মা দীর্ঘদিন ধরে রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। তার জন্য চিকিৎসকরা প্লাটিলেট ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারণে আমরা চারজন রক্তদাতাকে একসঙ্গে করতে পারেনি। এমনকি ঢাকায় যাওয়ার মতো আমাদের অর্থও ছিল না। এ কারণে আমরা রংপুরেই চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। আজ হাসপাতালে নতুন এফেরেটিক মেশিন স্থাপনের পর আমার প্রতিবেশি একজন প্লাটিলেট দিয়েছেন। এতে আমাদের অর্থ এবং সময় দুটোই বেশ সাশ্রয় হয়েছে। এমন উন্নত মেশিনের ব্যবস্থা করায় সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. জোবায়দা জান্নাত বলেন, এখন থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্বের সর্বাধুনিক এফেরেটিক মেশিনের সাহায্যে প্লাটিলেট এফেরেটিক, স্টেমসেল সংগ্রহ (পিবিএসসি), থেরাপিউথিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ (টিপিই), সাইটো এফেরেটিক, সিসিপি করা যাবে।

তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়। আগে চারজনের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে এফেরেসিস করে ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হতো। আমাদের হাসপাতালে এফেরেটিক মেশিন স্থাপন করায় এখন সরাসরি ডেঙ্গু রোগীর জন্য একজনের কাছ থেকে প্লাটিলেট নেওয়া যাবে। এতে করে দাতার রক্ত দিতে হবে না। এফেরেটিক মেশিনের মাধ্যমে সরাসরি রক্তের এফেরেসিস করে প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীকে দিতে পারবেন।

এফেরেটিক মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডায়ামেড-এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ফাহাদিন বিন হাকিম জানান, সারাদেশের বিভিন্ন হাসাপাতালে ৫১টি মেশিন রয়েছে, এরমধ্যে পুরো রংপুর বিভাগে এটি প্রথম স্থাপিত এফেরেটিক মেশিন। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে এই মেশিনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন। কিন্তু ঢাকায় বা অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এফেরেটিক মেশিনে সেবাগ্রহণ অনেক ব্যয়বহুল। এখন সরকারি হাসপাতালগুলো তিন হাজার টাকা লাগছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে প্লাটিলেট  বা অন্য কোনো সেবা পেতে কমপক্ষে ২৫-৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস