লক্ষী কান্ত রায়

করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখতে পান ২০১৪ সালের ৩ জুনে মারা গেছেন তিনি। সেই শিক্ষক লক্ষী কান্ত রায়ের অকার্যকর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ডটি অবশেষে সচল হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাতে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে অকার্যকর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিকেল থেকে সচল হয়। সচল হওয়ার পরে তিনি একটি স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‌‌‌‍‘নি‌জেকে মৃত দেখে অবাক হলেন শিক্ষক’ ও ‘জীবিত স্কুলশিক্ষককে মৃত দেখানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি’ শিরোনামে দুটো প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। 

ঢাকা পোস্টকে ধন্যবাদ দিয়ে লক্ষী কান্ত বলেন, ‌‌‌‍‘জাতীয় পরিচয়পত্র অকার্যকর হওয়ার কারণে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। সাংবাদিকরা সহযোগিতা না করলে হয়তো এত দ্রুত পরিচয়পত্র সচল করা সম্ভব হতো না। এ কারণে ঢাকা পোস্টসহ সকল মিডিয়ার ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

জানা গেছে, ‌আদিতমারী উপজেলার একটি স্থানীয় দোকানে করোনার টিকার নিবন্ধন করতে যান শিক্ষক লক্ষী কান্ত রায়। এ সময় একাধিকবার চেষ্টা করলে সার্ভার সমস্যার কারণে সেখানে নিবন্ধন না করে চলে যান সদর উপজেলার কাকেয়াটেপা গ্রামের বাড়িতে।

কয়েকদিন পর আবারও স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে বসেন তিনি। সেখানে চেষ্টা করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অকার্যকর দেখায়। ওই দিন বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিদের জানালে তারা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে যোগযোগ করতে বলেন। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান তিনি। সেখান থেকে তাকে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৩ জুন তিনি মারা গেছেন। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র ‘অকার্যকর’ দেখাচ্ছে।

নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় , ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় মনমোহন রায় নামের এক ব্যক্তি লক্ষী কান্তকে ‌‘মৃত’ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেন। ওই আবেদনে মনমোহন নিজেকে লক্ষী কান্তের ভাই উল্লেখ করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করান মনমোহন।

তাছাড়াও মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে যাচাইপত্রে। তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আফতাব উজ্জামানের অনুমোদনে তালিকা থেকে লক্ষী কান্তের নাম বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

লক্ষী কান্ত রায় আরো বলেন, করোনার টিকার নিবন্ধন করতে শুধু নয়, ২০১৬ সালে মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৯ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। তখনও তার আঙুলের ছাপ মেলেনি। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি যে, আমাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, মনমোহন রায় নামে ওই ব্যক্তি সাথে তার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সে কারণে তিনি এমন করতে পারেন বলে ধারণা করছি। জাতীয় পরিচয়পত্রটি সচল হলেও অপরাধী যেন কোনো কারণে ছাড় না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর লক্ষী কান্ত রায়ের বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আয়তায় আনা হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান বলেন, স্কুলশিক্ষক লক্ষী কান্ত রায়ের অকার্যকর এনআইডি বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি বিভাগ থেকে আবার সচল করা হয়েছে। এখন তিনি ওই এনআইডি ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক প্রয়োজনীয় কাজ বা সেবা নিতে পারবেন।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/ওএফ