চালের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় ওএমএসের সাশ্রয়ী মূল্যের চাল ও আটা কিনতে শেরপুরে বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড়। গ্রাহক বেড়ে যাওয়ায় অনেকেরই ফিরে যেতে হয় চাল-আটা না নিয়েই। সেজন্য হিমশীতল আবহাওয়া উপেক্ষা করে গভীর রাতে থেকেই লাইন ধরে বসে থাকেন তারা। শেরপুর পৌর এলাকায় এমন চিত্র নিত্যদিনের।

এ সময় কথা হয় বৃদ্ধা হাছনা হেনার সঙ্গে। থাকেন পাকুড়িয়া মমিনা কান্দা এলাকায়। অসুস্থ স্বামী আর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। অন্যের বাসায় কাজ করেন। কয়েকদিন সকালে এসে পড়েছেন বিপাকে, ওএমএসের চাল-আটা না নিয়েই ফিরতে হয়েছে নাড়িতে। তাই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই দাঁড়িয়েছেন লাইনে। 

হাছনা হেনা বলেন, দিনে চাল নিবার আইলে লাইনে দাঁড়াবার পাইনে। অন্যরা ধাক্কা দিয়ে হরাইয়া দেয়। হের লাইগ্যা রাইতেই আইলাম। হারারাত থাইকা ২৫০ টেহা দিয়া ৫ কেজি চাল আর ৫ কেজি আটা নিয়া বাড়িত যামু।  কি করমু বাজারে ত দাম অনেক বেশি।

বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) রাতে শেরপুর শহরের পুরাতন গরুহাটি ও সজবরখিলা এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।  

জানা গেছে, বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল ও আটা। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে দিন-দিন। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সরকারের ওএমএস কর্মসূচির চাল ও আটা ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন এসব মানুষ।

এ কর্মসূচিতে প্রতিজন ব্যক্তি পান ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল ও ২০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা। যা বাজারের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে। শেরপুর পৌর এলাকায় ৯টি ওয়ার্ডে ১০ জন খাদ্য ডিলার রয়েছেন। প্রতি ডিলার প্রতিবার পান এক মেট্রিক টন চাল ও এক মেট্রিক টন আটা। 

প্রতিদিনই পৌর এলাকার কোনো না কোনো ওয়ার্ডে ট্রাক থেকে চাল-আটা বিক্রি করেন ওএমএস ডিলাররা। তারা প্রতি গ্রাহকের কাছে ৫ কেজি করে চাল ও আটা বিক্রি করতে পারে ২৫০ টাকায়। এতে করে ২০০ জন করে দুই দিনে ৪০০ জন পান এসব পণ্য। তবে ডিলারের ট্রাকে প্রতিদিন ভিড় করে পাঁচ শতাধিক মানুষ। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় অনেকেই। যাদের অধিকাংশই শ্রমিক, গৃহকর্মী, বৃদ্ধ ও অসহায় ব্যক্তি। এজন্য এখন তারা রাত ১১টার পর থেকেই ওএমএস ডিলারদের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে এসে লাইন ধরছেন।

লাইনে দাঁড়ানো পাকুড়িয়ার ফজিলা খাতুন বলেন, আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে পরিবার চালাই। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। তাই রাতেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। একটা কার্ড পাইলে তা দিয়ে চাল-আটা কিনে সবাইকে নিয়ে খাব।

বৃদ্ধ কাদির মিয়া বলেন, আমি পাঁচ দিন আইসা ঘুইরা গেছি গা। না পাইয়া আজকা রাতে আইয়া লাইনে বইছি। চাইল লইয়া পরে বাইত যামু।

তবে ডিলাররা বলছেন, সরকার থেকে যা নির্ধারিত, তার বেশি দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে চাহিদা বেশি থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন পাঠিয়েছেন তারা। 

শেরপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ডিলার মো. শাহজালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন ২০০ জনকে দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও আমাদের ওখানে ৫০০-৬০০ নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন অর্ধেকেরও বেশি মানুষ চাল আটা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। আমাদের তো কিছু করারও নেই। আমরাও কষ্ট পাই। সরকার যদি বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতো, তাহলে সবার জন্য ভালো হবে।  

শেরপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই পরিমাণই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভোক্তার প্রচণ্ড চাপ। আমরা প্রতিনিয়তই লক্ষ্য করছি। বিষয়টি আমরা ডিসি স্যারকে জানিয়েছি।

এসপি