দক্ষিণাঞ্চল বিএনপির একসময়ের প্রতাপশালী নেতা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ না থাকায় হতাশ বিএনপির একাংশ। সেই সঙ্গে দলের যুগ্ম মহাসচিব পদে থেকেও নিজ রাজনৈতিক এলাকায় গণসমাবেশের অনুষ্ঠানে ব্যানারে তার নাম নেই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।

তাদের দাবি, দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে সরোয়ারকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। অনেকেই গণসমাবেশে সরোয়ারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রস্তুত সভা মঞ্চে গণসমাবেশের ব্যানার টানানোর পর কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঢাকা পোস্টকে এমন প্রতিক্রিয়া জানান। যদিও তারা নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখানকার সংসদ সদস্য ছিলেন। চিফ হুইফ ছিলেন। বর্তমানে কেন্দ্রের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তাকে উপেক্ষা করে গণসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে দলের জুনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে খারাপ বার্তা যাচ্ছে।

আরেক সাবেক ছাত্রনেতা অভিযোগ করেন, বর্তমানে জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ তুলনামূলক নতুন রাজনীতিবিদ। তারা সকলেই একসময়ে সরোয়ারের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন। তারা সুযোগ পেয়ে ইচ্ছে করে সরোয়ারকে কোণঠাসা করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ারের মতো একজন নেতাকে উপেক্ষা করে বরিশাল বিএনপি পূর্ণ শক্তিতে অবতীর্ণ হতে পারবে না কখনোই।

তাদের দাবি, বিএনপির পরীক্ষিত নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার গণসমাবেশের ব্যানারে সঠিকভাবে মূল্যায়িত হননি।

যদিও গণসমাবেশের ব্যানার নিয়ে বিশেষ কোন মন্তব্য করতে চাননি স্থানীয় নেতবৃন্দ।

তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও গণসমাবেশের সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, সমাবেশের ব্যানারে কার নাম যাবে আর কার নাম যাবে না তা আমরা ঠিক করার কেউ না। এই ব্যানার এবং অতিথি নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্ধারণ করেন। ফলে এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না।

এ বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ারের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সভা মঞ্চ পরিদর্শন করেন। তখন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ থাকলেও মজিবর রহমান সরোয়ারকে দেখা যায়নি।

যদিও ২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দাবি করেছিলেন, বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে মজিবর রহমান সরোয়ারকে উপেক্ষা করা বা তিনি অনুপস্থিত এমন কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। সকলেই একযোগে সমাবেশের জন্য কাজ করছেন। তবে সমাবেশের আগের রাতে মজিবর রহমান সরোয়ারকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করেছেন খোদ মহানগরের কয়েকজন নেতা।

উল্লেখ্য, শনিবার (৫নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতিও নিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে দুই দিন আগে থেকেই হাজির হয়ে থাকছেন। তবে গণসমাবেশের প্রস্তুতির প্রচার প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী বরিশালে আসলে দুই-একদিন প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে সরোয়ারকে। এর বাইরে তার উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। সর্বশেষ সমাবেশের ব্যানারে তার নাম না থাকায় বিভাজনের দৃশ্য আরও প্রকট হচ্ছে বলে ধারণা রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসকেডি