বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম তানু ভূঁইয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির নেতারা। 

তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সাহসী নেতাকর্মীদের দেশব্যাপি যে হত্যাকাণ্ড ঘটছে এটি তারই ধারাবাহিকতা বলে উল্লেখ করেন নেতারা। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জেলায় চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। হত্যায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
 
শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে দুপুর ২টায় নিহত নুরে আলম তানু ভূঁইয়ার বাড়ির সামনে বাসাবাটি এলাকায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের পুরাতন বাজার মোড় এলাকায় ২য় নামাজে জানাজা শেষে সরুই কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর নামাজে জানাজায় অংশ নিতে জাতীয়তাবাদী দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুরাতন বাজাড় মোড়ে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ঝটিকা মিছিল করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। 

এসময়, জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম, সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, বিএনপি নেতা শাহেদ আলী রবি, খায়রুজ্জামান শিপন, জেলা যুবদলের সভাপ্তি হারুন অর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লাসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে দুপুর একটার দিকে তানু ভূঁইয়ার মরদেহ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত বলেন, আমরা দলের জন্য নিবেদিত এক কর্মীকে হারিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান নিরপেক্ষ থেকে তানু ভূঁইয়ার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, যারা হত্যা করেছে তাদের নাম প্রশাসনের কাছে রয়েছে। রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এর আগে ২০১৭ সালেও খুলনার স্যার ইকবাল রোডে তানুকে গুলি করেছিল দুর্বৃত্তরা।

চার দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সোমবার জেলার প্রতিটি ইউনিটে দোয়া ও কালোব্যাজ ধারণ, মঙ্গলবার জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, তৃতীয় দিন বুধবার প্রতিটি উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং বৃহস্পতিবার দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা করছে। হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি পদ্মপুকুরের মোড় এলাকায় ফরিদ নামের এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন নুরে আলম তানু ভুঁইয়া। নিহত তানু ভুঁইয়া বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার মৃত আব্দুর রউফ ভুঁইয়ার ছেলে। তিনি বাগেরহাট জেলা ছাত্র দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অভিযুক্ত ফরিদ বাসাবাটি এলাকার টুটুল শেখের ছেলে। ফরিদের নামে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা রয়েছে। 

তানজীম আহমেদ/এমএএস