দিনমজুর সিরাজুল হক ফকির (৪৮)। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। যা আয় করতেন তা দিয়েই চলছিল পরিবারটি। কিন্তু হঠাৎ নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। একদিন কাজ করার সময় ইট ভাঙার মেশিন উল্টে গরম পানি পড়ে শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে যায়। থমকে যায় প্রাণোচ্ছল একটি পরিবার। বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। ধুকেধুকে মৃত্যুপথযাত্রী হচ্ছেন তিনি।

সিরাজুল হক ফকির মাদারীপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ফেরিঘাট বাহেরচর কাতলা ৮নং ওয়ার্ডে অন্যের বাড়িতে স্ত্রী জাহানারা বেগম ও তিন ছেলে জাহাঙ্গীর (১০), জিহাদ (৮) ও জোনায়েদকে (৩) নিয়ে বসবাস করছেন। 

সিরাজুল হক ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছর আগে কাজ করার সময় ইট ভাঙার মেশিন উল্টে মেশিনের গরম পানি শরীরের ওপর পড়ে। এতে শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে যায়। এছাড়া মেশিনের চাপে পায়ের একটি  অংশ ভেঙে যায়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসা করতে গিয়ে আমার বসতভিটা ও জমি যা ছিল সব বিক্রি করতে হয়েছে। এখন শরীরের পোড়া অংশ কিছুটা শুকিয়েছে। আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া পায়ের ভাঙা স্থানে সার্জারি না করলে ঠিক হবে না। কিন্তু আমার আর কোনো সামর্থ্য নেই। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পরের বাড়িতে থাকি। সরকার ও বিত্তবানরা যদি সাহায্য করেন তাহলে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে সন্তানদের নিয়ে বাঁচতে পারব। তা না হলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। 

অসুস্থ সিরাজুল হক ফকিরের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আজকে তিন দিন হয়েছে ঘরে কোনো টাকা নেই। কিভাবে যে দিন পার করছি একমাত্র আল্লাহ জানেন। আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের একটু সহযোগিতা করুন। আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য সকলের সহায়তা চাই।

সিরাজুল হকের ছেলে জিহাদ বলে, আমার অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা করার জন্য একটু সাহায্য করেন। বাবা সুস্থ হয়ে আবার ঠিকমতো কাজ করতে পারলে আমরা বাঁচতে পারব। 

স্থানীয় লোকমান বেপারী বলেন, আমরা গরিব মানুষ, যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তাদের যে অবস্থা ঠিকমতো খেতেই পারছে না। সরকার এবং বিত্তবানরা যদি তার দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে সে সুস্থ হয়ে আবার কাজ করতে পারবে। 

পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলায়েত হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি। অসুস্থ সিরাজুল হক ফকিরকে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদাউসি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদন করলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করা হবে। 


রাকিব হাসান/এমজেইউ