রাতের ঢাকা

সন্ধ্যা হলেই সাভারের সড়ক হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীর আখড়া। ছিনতাইয়ের শঙ্কা নিয়েই এ সড়কে চলাফেরা করতে হয় কর্মমুখী মানুষদের। সর্বশেষ সোমবার  (১৪ নভেম্বর) সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিককে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সাভার ও আশুলিয়ায় কমপক্ষে ১৫টি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক মোটরসাইকেল আরোহী ও এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন।

পুলিশ ও পত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৬ সেপ্টেম্বর সাভারের ঝাউচড়ে নাসির (৩৫) নামের এক অটোরিকশা চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই করে। নিহত রিকশাচালক নাসির বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।

১২ সেপ্টেম্বর নবীনগরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মুরগী ব্যবসায়ীর ৪ লাখ টাকা লুট করে ডাকাতরা। তাদের মধ্যে ধামরাইয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিরোজপুর জেলার নুরুজ্জমানের ছেলে মো. রুবেল হোসেন (২৯), পটুয়াখালির হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সওকত হোসেন (৩০), একই জেলার শাহাজাহানের ছেলে নুল ইসলাম, সানু মিয়ার ছেলে নরুল মিয়া ও ঝালকাটির আবুল কালাম আজাদের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম (২৭)।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার আল-মদিনা বিরিয়ানি হাউসের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার সুবনাপুর গ্রামের মো. আকতার হোসেনের ছেলে সাজু (১৯), নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার কাকিনা চাপানি গ্রামের আরশাদ হকের ছেলে হাবিবুর রহমান সম্রাট (১৮), ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার সিগারপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম ওরফে জাহারুল ও ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার গোপালপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. নাঈম। তারা বর্তমানে আশুলিয়ার ইসলামনগর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকে।

গত ৩ অক্টোবর আশুলিয়ায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রাজিব হোসেন (৩৪) নামের এক যুবক নিহত হন। ওই যুবক মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিহত রাজিব টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার নাল্লাপাড়া গোয়ারিয়া গ্রামের জাফর মিয়ার ছেলে। 

৫ অক্টোবর সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে রাত ১২টার সময় ওষুধ কিনতে যাওয়ার পথে মহাসড়কে আরোহী মোবারক হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার কিংবা মোটরসাইকেল উদ্ধার সম্ভব হয়নি। 

এরপর গত ১৩ নভেম্বর সাভারে যাত্রীবেশে চালকের হাত-পা বেধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করলে এর সাথে জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিয়ার শেখ (৪২) রাজবাড়ির কালুখালি থানার হরিণবাড়িয়ারচর গ্রামের মৃত হামিদ শেখের ছেলে। অপরজন নওগাঁ জেলা সদরের আরজিনগর মধ্যপাড়া গ্রামের হামিদুলের ছেলে সালাম (৩০)।

ছিনতাইয়ের কবলে পড়া সৌরভ বলেন, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দিয়ে সাভারের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী আমাকে থামার জন্য সিগন্যাল দেয়। আমি মোটরসাইকেল স্লো না করায় তারা লম্বা দা দিয়ে আমার পিছনের আরোহীকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত দায়ের কোপ তার গায়ে লাগেনি। আমরা প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি। সাভারে ছিনতাইকারী আসলে কমছেই না। ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সাভার মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, রাতে সাবধানতা অবলম্বন করে পথ চলতে হবে। অন্ধকার ও জনমানবহীন এলাকায় রাতে ঘোরাফেরা বন্ধ করতে হবে। আমরা আমাদের দিক থেকে ছিনতাই রোধে কাজ করছি।

মাহিদুল মাহিদ/আরকে