আয়েশা খাতুন

স্বামী-সন্তানহীন। শেষ সম্বল স্বামীর রেখে যাওয়া ১৪ শতক জমি। এই জমিই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশীসহ স্বজনদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে এ সম্পদে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জনার্দ্দনপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আয়েশা খাতুনের।

আয়েশা খাতুন বলেন, কার্ড-ভাতা পাই নাই। ভাঙা ঘরে কোনো রকম থাহি। আমারে এই জায়গায় থাকতি দিবিনে। নাতটুকুয় আমার জানডা ঠোঁটের ওপর থাহে।

আয়েশা আরও বলেন, সরকার আমারে এট্টু ঘর দিলে থাকতে পারতাম। কেউ ওই ঘর ভাঙতে পারত না। এট্টা বিটাউ যদি থাকত দিন গিলি আমারে এক নালা ভাত দিত। তাও আমার নাই। আমি অন্য কোথাও যাতি চাইনে। জমি বিক্রিও করতে চাইনে। স্বামীর ভিটেই মরতি চাই।

জানা গেছে, আয়েশা খাতুনের স্বামী-সন্তান নেই। নিকট আত্মীয় বলতেও তেমন কেউ নেই। স্বামী আব্দুল ওয়াজেদকে হারিয়েছেন দশ বছর আগে। সম্বল বলতে চৌদ্দ শতক জমির ওপর পাটকাঠির বেড়ার একটি ঘর। তাও বর্তমানে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্বামীর আত্মীয়সহ প্রতিবেশীরা তাকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছেন। ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। ঘরের দরজা খুলে বেআইনীভাবে ঢুকে নির্যাতন করছেন। 

এলাকাবাসীরা জানান, আয়েশা খাতুন সকালে ভিক্ষা করার জন্য বের হয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরেন। যা পায় তাই দিয়েই পেট চালান। তাকে উচ্ছেদ করার জন্য কিছু লোক বেআইনীভাবে তার ঘরে প্রবেশ করেন। বৃদ্ধা আয়েশা চিৎকার শুরু করলে তারা পালিয়ে যায়। অন্যের বাড়ি কাজ করে নিজের ভরণ পোষণ চালাতেন তিনি। এখন বয়স হয়েছে, কাজ করতে পারেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃদ্ধার ঘরের পাটকাঠির বেড়ায় আগুনে পোড়ার চিহ্ন রয়ে গেছে। চালের টিনে মরিচা ধরেছে। বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ছিদ্র। বৃষ্টির সময় ঘরের মধ্যে পানি পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহম্মেদ জানান, আয়েশা খাতুন খুবই কষ্টে আছেন। অসহায় এ নারীকে দেখার কেউ নেই। তার একটা সরকারি ঘর, বিধবা ভাতা খুবই দরকার।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজী মো. জয়নুর রহমান বলেন, তার জন্য আমরা বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করছি। তিনি ভাতা পাবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, খুবই দ্রুত আমরা তার খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার নিরাপত্তা এবং ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

জালাল উদ্দিন হাককানী/এসপি