উত্তরবঙ্গের জেলা দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নয়াবাদ মসজিদ। দেশের অন্যতম প্রাচীন এ মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা। জেলার আরেক ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দির থেকে মাত্র দেড় কিলেমিটার দূরেই এই স্থাপনার অবস্থান।

১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামনাথ ও প্রাণনাথের শাসনামলে বিখ্যাত কান্তনগর মন্দির নির্মিত হয়। তখন মধ্যপ্রাচ্য (ইরাক ও ইরান) থেকে আসা মুসলমান স্থাপত্যকর্মীরা পার্শ্ববর্তী নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন। পরে সেখানেই গড়ে ওঠে নয়াবাদ মসজিদটি।

নয়াবাদ মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর চার কোনায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির মিনার। মসজিদে ঢোকার জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি দরজা। মাঝের দরজার উচ্চতা ১ দশমিক ৯৫ মিটার, প্রস্থ ১ দশমিক ১৫ মিটার। পাশের দরজাগুলো একই মাপের এবং অপেক্ষাকৃত ছোট। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহু খাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব।

পুরো দেয়ালজুড়ে আয়তাকার বহু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে পোড়ামাটির নকশাগুলো খুলে পড়েছে বহু জায়গায়। ফলকগুলোর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। এ রকম ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে মসজিদজুড়ে। তবে ফলকের মধ্যে অলংকরণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উদ্যোগে নয়াবাদ মসজিদের সংস্কারকাজ হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মসজিদটির চারপাশে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থান। রাতের আঁধারে আলোকসজ্জার জন্য মসজিদ এলাকায় পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নয়াবাদ মসজিদের খতিব হাফেজ মো. জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রাচীন নয়াবাদ মসজিদ এই অঞ্চলের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। ৮১ শতক জমির ওপর নির্মিত মসজিদটি ১৯৬৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় যায়। ১৯৮৬-৯০ সালের মাঝামাঝি মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। দ্বিতীয় সংস্কার করা হয় ২০০৭ সালে, তৃতীয়বার করা হয় ২০১৩ সালে। সবশেষ সংস্কার করা হয়েছে ২০১৯ সালে। সব মিলিয়ে মসজিদের ৬০ ভাগ সংস্কার হয়েছে। করোনা মহামারি না থাকলে হয়তো শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ হতো।

মো. জাহিদ জানান, প্রতি শুক্রবার এই মসজিদের বারান্দায় মুসল্লিতে পূর্ণ হয়। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সারা বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। এখানে হোটেল-মোটেল স্থাপন করলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে।

কীভাবে আসবেন
দিনাজুপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কান্তজিউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে ও রেলপথে যাওয়া সহজ। এ ছাড়া বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করে নয়াবাদ মসজিদ ও কান্তজিউ মন্দিরে যাওয়া যাবে।

পরিবহন ভাড়া
ঢাকা থেকে দিনাজপুর জেলা শহরে বাসযোগে ভাড়া ৭০০ টাকা। ট্রেনে ৫০০ টাকা।

থাকা ও খাওয়া
কান্তজিউ মন্দিরের পাশেই একটি সরকারি রেস্ট হাউস এবং একটি পর্যটন মোটেল রয়েছে। আশপাশে ছোট-বড় হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন মানের খাবার পাওয়া যায়।

এনএ