এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুনামগঞ্জে আবারও অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট চলছে। হঠাৎ ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। সড়কে পার্কিং করে রাখা বাস আটক করে পুলিশ লাইন্সে নেওয়ার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সুনামগঞ্জ বাস মালিক-শ্রমিক সমিতি। 

এর আগে গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর চার দফা দাবিতে দুদিনের পরিবহন ধর্মঘট পালন করে বাস মালিক-শ্রমিক সমিতি। ওই দুদিনও সুনামগঞ্জের মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর হঠাৎ ধর্মঘটের ঘোষণা আসে। এতে বিড়ম্বনার পড়েছেন সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলগামী হাজারো যাত্রী। আন্তজেলা পরিবহনের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে আঞ্চলিক পরিবহনও। সড়ক একদম ফাঁকা। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য পরিবহনও কম দেখা গেছে। 

জগন্নাথপুর উপজেলার সখি দেবনাথ সকাল থেকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালে এসে বাস খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ধর্মঘট চলছে। জানলে কি আর ইকানো আইতামনি। বিশ্বম্ভপুর উপজেলার পলাশে আত্মীয়ের বাড়িত বেড়ানিত আইছলাম। অখন আর বাড়িত যাইতাম পাররাম না।’ 

তাহিরপুর থেকে আসা মাও খিজির আহমেদ বলেন, আজকে সিলেটে ডাক্তারের টিকিট রাখা। ডাক্তার দেখানোর জন্য সিলেট যাব। কিন্তু এসে দেখি ধর্মঘট। কোনোভাবেই সিলেট যাওয়া সম্ভব না। 

সদর উপজেলার আবুল হাসান বলেন, দুই দিন পর পর ধর্মঘট। এইটা কি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করছি আমরা। যার যখন খুশি নিজ স্বার্থ আদায়ে আমাদের জিম্মি করে। 

জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালে লোকাল বাসের জায়গা হয় না। এর মধ্যে আন্তজেলা বাস রয়েছে ৮০টিরও বেশি। এই বাসগুলো টার্মিনালে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা বাস টার্মিনালের পুকুর ভরাট করে টার্মিনাল বড় করার দাবি করছি। সেটিও হচ্ছে না। এই অবস্থায় সড়কেই বাস রাখতে বাধ্য হচ্ছেন আন্তজেলা বাসের চালক-শ্রমিকরা। 

তিনি আরও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়েজখালী এলাকার সড়ক থেকে দূরপাল্লার  শ্যামলী, মামুন ও সাকিল পরিবহনের তিনটি বাস আটক করে পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় চালক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। এজন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আন্তঃজেলা বাসসহ দূরপাল্লার কোনো যাত্রবাহী বাস দেশের কোথাও যাচ্ছে না। বাসগুলো না ছাড়া পর্যন্ত কোনো আন্তজেলা বাসও চলবে না।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার এহসান শাহ বলেন, সড়কের ওপর বাস রাখায় জনসাধারণের ভোগান্তি হয়। সড়কে তৈরি হয় যানজট। আইন-শৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সভায় এই বিষয়টি বার বারই আলোচনা হয়। এই অবস্থায় ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য তিনটি বাস পুলিশ লাইন্সে এনে রাখা হয়েছে। এ কারণে ধর্মঘট ডেকে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা যুক্তিযুক্ত নয়।

সোহানুর রহমান সোহান/আরএআর