নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, বিএনপি এখন আম্মা ও ভাইয়া গ্রুপে বিভক্ত। ভাইয়া গ্রুপ চিন্তা করে ২০২৮ সালের নির্বাচন, তারা ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে না। যে মায়ের চিন্তা করে না সে দেশের চিন্তা কী করবে, এরা কারা?

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান চন্দন শীলের সভাপতিত্বে রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ ভবন প্রাঙ্গণে সংস্থাটির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান ও প্রথম সভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আপনারা ক্ষমতায় আসবেন না, এমনকি ক্ষমতার কাছেও আসবেন না। আপনারা বলবেন তাহলে আমরা কী করতেসি? আপনারা আপনাদের লন্ডনের নেতার কথায় লাফাচ্ছেন। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও মিষ্টির দোকানে দেখবেন সকাল বেলায় তাওয়া গরম করে, আপনারা হলেন সেই তাওয়া। আপনাদের লন্ডন থেকে গরম করা হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের গরম তাওয়ায় খেলবে তৃতীয় পক্ষ, যারা আপনাদেরকে ভিত্তি করে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে তারা কোনোদিনও এই দেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

শামীম বলেন, আমি আপনাদের সামনে একটি পরিসংখ্যান দেই, ২০১৩-১৫ সালে এরা ৩ হাজার ৫’শ বায়ান্নটি গাড়ি পুড়িয়েছে, ২৯টি রেল ও ৯টি লঞ্চ পুড়িয়েছে, ৫’শ ৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে, ৬টি ভূমি অফিস ও সরকারি আরও ৭০টি অফিস পুড়িয়েছে, আন্দোলনের নামে ৩ হাজার ৩৬ জনের শরীরে আগুন দিয়েছে যার মধ্যে ৫ শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এখানেই শেষ না ২৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ও একই দিনে ৫’শ এর বেশি জায়গায় বোমা হামলা করা হয়েছিল। কে করেছে, কারা করেছে? ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কথা বলতে চাই না, উনার বয়স হয়ে গেছে। উনাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে এইসব হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এই সব সন্ত্রাসী কর্যকলাপকে আন্দোলন বলে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে।

তিনি বলেন, আজকে কারা গণতন্ত্রের কথা বলছে? আমি দলীয় পরিচয়ের বাইরে থেকে সকলের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, এরা কারা? আমরা যারা রাজনীতি করি সবাই দেশের জন্য রাজনীতি করি। রাজনীতি করতে এসে টিয়ার গ্যাস থেকে শুরু করে বন্দুকের গুলি, বোমা বিস্ফোরণ সবই হয়েছে আমাদের ওপর। আমি শামীম ওসমান আমার এই হাত দিয়ে ৪৯ জনের লাশ দাফন করেছি। লাশ নিয়ে কবরস্থানে যেতে পারি নাই। পথে আমাদের নেতাকর্মীদের লাশের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। সত্তরটি ছিটাগুলি সেই লাশের ভিতর থেকে বের করা হয়েছে। আমরা কিন্তু ক্ষমতায় এসে কাউকে আঘাত করি নাই। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে অনেক খুনিদের আস্ফালন শুনি। এদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্র শিখতে হবে?

তিনি আরও বলেন, আজকে উন্নয়ন উন্নয়ন সবাই বলছেন, উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করছেন। আমি শুধু ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতা ছাড়লো তখন তারা বাজেট দিয়েছিলেন ষাট হাজার কোটি টাকা, অনেক টাকা। আর আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সর্বশেষ যে বাজেট দিয়েছে তা হল ষাট লাখ কোটি টাকা। উন্নয়নের পার্থক্যটা এখানেই, সুতরাং উন্নয়ন যা হবার হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করে তাদের কাজ শেষ করেছেন, আমরা যারা পচাত্তরের পরের প্রজন্ম তারা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছি। কিন্তু এখনকার যেই তরুণ ও যুবকরা রয়েছে তাদের হাত ধরে এদেশের অর্থনৈতিক বিপ্লব নিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। আনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান এম. এ রশিদ, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামছুল ইসলাম ভূঁইয়া, আড়াইহাজার উপজেলা চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম হোলো সরকার, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত সদস্য জনাব মাসুম আহম্মেদ, মো. আবু নাইম, মিঞা মো. আলাউদ্দীন, আনছার আলী, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাদিয়া আফরিন ও সীমা রানী দাস। এছাড়াও উপস্তিত ছিলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।

আবির শিকদার/আরকে