অভিযুক্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জামাল সালেহ উদ্দীন আরজু

লক্ষ্মীপুরে আবদুর রহমান আরিয়ান (২) নামে এক শিশুর পাইলসের চিকিৎসার পরিবর্তে জিহ্বার নিচের অংশে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর টাউন হলের সামনে ডা. আউয়াল শিশু সার্জারি সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এসআই আবদুল ওদুদ হাসপাতালে এসে উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ, রোগীসহ স্বজনরা হাসপাতালেই ছিলেন। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জামাল সালেহ উদ্দীন আরজু তার ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার ভুল হয়েছে। তবে এতে কোনো সমস্যা হবে না। যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সব দায়ভার আমার। প্রয়োজনে আমি এ ঘটনায় লিখিত দেব।

জামাল সালেহ উদ্দীন আরজু চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের মালিক। 

ভুক্তভোগী আরিয়ান সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় চাকরি করেন। 

শিশু আরিয়ানের বাবা নিজাম উদ্দিন ও মা লিপি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আরিয়ানের পায়খানা করতে সমস্যা হতো। এজন্য সম্প্রতি তাকে সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ইসমাইল হাছানকে দেখানো হয়। তিনি ওষুধ দিয়েছেন। কিন্তু ভালো হয়নি। এতে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডা. আউয়াল শিশু সার্জারি সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। ডা. জামাল সালেহ উদ্দিন আরজু তাকে দেখে পাইলসের সমস্যার কথা বলেন। এতে তিনি হাত দিয়ে যাচাই করার কথা বলেন। সাড়ে ১২টার দিকে নার্স এসে আরিয়ানকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তাকে অচেতন করার ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরে শিশুর বাবাকে অপারেশন কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর তাকে অপারেশন কক্ষ থেকে বের করে নার্সরা বেডে এনে রাখেন। এ সময় নার্সরা বলেন, শিশুর জিহ্বার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। সে এখন কথা বলতে পারবে। এটি শুনেই শিশুর মা লিপি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার বাবুর ছিল পাইলসের অপারেশন। কিন্তু জিহ্বা কাটা হলো কেন? এরপরই হাসপাতালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। 

আরিয়ানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার বাবুর পায়খানা করতে সমস্যা হতো। চিকিৎসক হাত দিয়ে সমস্যাটি দেখবেন বলেছিলেন। পাইলসের অপারেশনেরও কথা ছিল না। কিন্তু তিনি আমার বাবুর জিহ্বা অপারেশন করে ফেলেছে৷ এ ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করব। 

লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল ওদুদ বলেন, দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ কবির বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এজন্য ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর