কৃষকের স্বপ্ন শেষ, এক রাতে ৪০০ আমগাছ কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা
রাজশাহীর বাঘায় এক রাতে ২০ জন কৃষকের ৪০০ আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামে রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযাগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের মাঠে সাধন কুমার প্রামাণিক, আবু সামা, জামাল, অমৃত, রানা, অজিত, নিখিল, গপেন, নিপেন, শৈলেন, হাফিজুল, চিত্তরঞ্জন, প্রদীপ, নিপেন, ভুপেন, নিত্য, রতন, চিত্তরঞ্জনসহ ২০ জন কৃষক ২ থেকে ৫ বছর আগে বিভিন্ন জাতের আম গাছ রোপণ করেন জমিগুলোতে। প্রতিটি গাছে আম ধরা শুরু করেছে। তবে রাতের আঁধারে কে বা কারা শত্রুতা করে ৪০০টি গাছ কেটে ফেলেছে।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় হাবাসপুর গ্রামের আম বাগান মালিক সন্তোষ প্রামাণিকের ছেলে সাধন কুমার ও আজিজুর রহমানের ছেলে আবু সামা বাদী হয়ে সোমবার সকালে বাঘা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে অভিযোগে তারা কারও নাম উল্লেখ করেননি। এর আগেও গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। কারা, কী কারণে গাছগুলো কেটেছে, কেউ কিছু বলতে পারছেন না। বাঘার আম বাগান সমৃদ্ধ এলাকা হাবাসপুর। এ গ্রামের প্রায় সব জমিতে আমগাছ রয়েছে। এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও রয়েছে আমগাছ। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, সেগুলো অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় লাগানো হয়েছিল। আগে ওই জমিতে শুধু ধান চাষ করা হতো।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গভীর রাতে কে বা কারা ২০ জন কৃষকের আম বাগানের গাছ কেটে দিয়েছে। এক রাতে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল দুর্বৃত্তরা। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী কৃষক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, তার জমিতে ২৫টি আমের গাছ ছিল। সেই আমগাছগুলো গত বছর টেপ কলম করা হয়। তাতে করে আমের গাছ উন্নত জাতে রূপান্তর করা হয়। এই কাজে তার ২০ হাজার টাকা খরচও হয়েছি। তিনি আশা করেছিলেন এই বছর কিছু কিছু আম পাবেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা গাছগুলো কেটে ফেলেছে।
ভুক্তভোগী সাধন কুমার প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারো সঙ্গে শত্রুতা নেই। কারো সঙ্গে সমস্যা নেই। তারপরও কে যে আমাদের গাছগুলো কাটল আমরা জানি না। তিন দিন আগেই এই এলাকার ১৫০টি আমের গাছ কাটে দুর্বৃত্তরা। সকালে হঠাৎ দেখি পুরো মাঠের গাছ কাটা। কেউ কিছু বলতে পারে না। কারা এমন সর্বনাশ করেছে।
তিনি বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে নির্বাচন কেন্দ্রিক সমস্যার কারণে আমার ১৭টি আমের গাছ কাটা পড়েছিল। সেই সময় আমার স্বজনদের প্রায় ১৫০টির বেশি গাছ কাটা পড়ে। গাছের সঙ্গে কেন এতো শত্রুতা আমরা বুঝতে পারছি না।
বাঘা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাছ কাটার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোকমুখে শুনে আমি বাগানে গিয়েছিলাম। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমরা দেখব। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএআর