বিভিন্ন সময়ে জোর করে ‘স্পেসিফিক মার্কায়’ ভোট দেওয়া আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা খুবই সহজ। ব্যালটে এদিক সেদিক করার সম্ভাবনা থাকে, তবে ইভিএমে এ রকম কিছু করার কোনো শঙ্কাই নেই। একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। আগামীতে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভোটগ্রহণের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে ক্ষমতা একজন প্রিজাইডিং অফিসারেরও সেই ক্ষমতা। কোনো অনিয়ম হলে বা তার আওতার বাইরে গেলে তিনি ভোটগ্রহণ বন্ধ করার ক্ষমতা রাখেন।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি এসব কথা বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করব। মিডিয়ার ভাইয়েরাও থাকবেন, তারাও দেখবেন। আমরা স্বচ্ছতা এবং ভিজিলেন্সের মাধ্যমেই একটি সুষ্ঠু ভোট করব। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেবে, সেক্ষেত্রে যদি কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কেন্দ্রে প্রশাসনের লোকজন থাকবে। তাদের জানালে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোট যথাযথভাবে সম্পূর্ণ করবেন। 

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তায় যদি কোনো নির্বাচনের প্রচারণা বুথ করেন প্রার্থীরা, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কমিশনার আছেন তারা দেখবেন। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন। আমরা এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেব না।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাটা অনেক বেশি গুরুত্ব হয়ে পড়ে। এ সময় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলার বিপর্যয় ঘটে। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত  কোনো বিশৃঙ্খলা হতে আমরা দেখিনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা শুধুমাত্র প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যারা প্রার্থী রয়েছেন তারা যদি সাহায্য না করেন, তাহলে এটি রক্ষা করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। প্রার্থীরা আশ্বাস দিয়েছেন তারা শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাদের কোনো ছাড় নয় বলেও জানান তিনি। 

এর আগে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা মতবিনিময় সভায় আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনকালীন করণীয় বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় মেয়র-কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে জানান, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিধি লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, একাধিক ক্যাম্প স্থাপন, মিছিলসহ ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এ সময় প্রার্থীরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট প্রদান সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি কার্যক্রম চালানোর জন্য সিইসির প্রতি আহ্বান জানান।

পরে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রার্থীদের আচরণবিধি, গণসংযোগসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের করণীয় নিয়ে কথা বলেন ।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, আরপিএমপি কমিশনার নুরেআলম মিনা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন, জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন প্রমুখ।

অন্যদিকে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি এবং লতিফুর রহমান মিলন ছাড়াও ৩৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এবার মেয়র পদে নয়জনসহ মোট ২৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর এ সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হলেও এবার পুরো সিটির ২২৯টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর