খাল খননে কৃষকের সর্বনাশ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল-কালাই উপজেলার কাজীপাড়া-বেগুনগ্রামে খাল পুনঃখনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে আবাদি জমিতে। এতে শতাধিক বিঘা জমির ফসল মাটিচাপা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। ফসল রক্ষা করতে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন ৫৯ কৃষক।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে এক কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয়ে কাজীপাড়া-বেগুনগ্রাম খাল ৭.১ কিলোমিটার অংশের পুনঃখননের কাজ পায় কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাসির উদ্দিন মোল্লা। কাগজে-কলমে কাজ শুরুর কথা লেখা রয়েছে চলতি বছরের ২১ জুলাই। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের মে মাসের শেষে।
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাজীপাড়া মাঠের খাল খনন কাজ হয়েছে। করিমপুর এলাকার মাঠের কিছু অংশে খনন করা হয়েছে। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ আছে। খনন করা মাটি কৃষকের জমিতে ফেলা হয়েছে। এতে জমির ফসল সরিষা, আলু মাটিতে চাপা পড়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
ওই এলাকার ৫৯ জন কৃষক গত ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরেও ঠিকাদার একইভাবে খনন কাজ অব্যাহত রেখেছে।
তবে, তেল সংকটের কারণে দুদিন কাজ বন্ধ রয়েছে বলে এক্সেভেটরের (ভেকু) চালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছে।
কৃষকদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খাল খনন করা মাটি যে জমিতে ফেলা হচ্ছে তা কৃষকদের ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসব জমিতে মাটি ফেলায় প্রায় একশ থেকে দেড়শ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষকেরা খাল খননের মাটি সরকারি জমিতে রাখার দাবি জানিয়েছে।
খালের পাশে ২৫ শতক জমিতে আলু আবাদ করেছেন কৃষক আব্দুর জলিল। এই ফসলি জমির প্রায় ১৫ থেকে ১৭ শতক খাল খননের মাটি দিয়ে চাপা পড়ছে। এই কৃষক বলেন, আমাদের ফসলি জমির ওপর মাটি রাখা হচ্ছে। এটা যদি খাস জমিতে রাখা হতো তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। আমরা নকশা-সিএস এ পাচ্ছি খাল ২০-২২ ফিট। কিন্তু তারা ৩২ ফিট নিয়ে কাজ করছে। এতে দুপাশের জমি যাচ্ছে। সব জমিতে ফসল আছে। ফসল নষ্ট হওয়াতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক মোজাহার আলী বলেন, আমার ৮০ শতক জমিতে ফসল আছে। সরিষা ও আলু আবাদ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ২৬ শতক জমির ফসলের ওপর খাল খননের মাটি রাখা হয়েছে। এখন কি বলব। আমাদের প্রতিবাদ কেউ শোনে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজটি নিয়ে খনন করছেন কালাইয়ের তৌহিদুল ইসলাম বেলাল। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা। তৌহিদুল ইসলাম বেলাল বলেন, কয়েকজন কৃষক অভিযোগ দিয়েছে। খাল খননের মাটি পাশে রাখতে গিয়ে কৃষকের জমিতে যাচ্ছে। এতে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বরং বর্ষাকালে মাঠে যে পানি জমে থাকে তা এই খাল খননে নিষ্কাশন হলে কৃষকদের অনেক উপকার হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জয়পুরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিসি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। খাল খননের মাটি বেশি দূরে রাখা হচ্ছে। কাছাকাছি রাখার জন্য কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। এখন খালটির গভীরতা বেশি হওয়াতে মাটি কৃষকের জমিতে চলে যাচ্ছে। এটা উভয় সংকট। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। কৃষকেরা চাইলে নিজ জমি উন্নয়নের জন্য মাটি নিতে পারে। তাছাড়া আমরা নিলামের ব্যবস্থা করে মাটি অপসারণ করবো।
এমএ