বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ আরও এক জেলের মৃত্যু

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ আরও দুই জেলের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ মার্চ) বিকেল ও মঙ্গলবার  (০৯ মার্চ) রাতে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ট্রলারে বিস্ফোরণে ছয় জেলের মৃত্যু হলো।

মৃতরা হলেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামের বেলাল হোসেন (২৮), মো. মেহেরাজ হোসেন (২৬), চরলক্ষ্মী গ্রামের মো. মিলন (৩০), চররমিজ ইউনিয়নের চর গোসাই গ্রামের আবুল কাশেম (৫৫), মো. রিপন মাঝি (৩৮) ও মো. মেহরাজ উদ্দিন।

বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মেহেরাজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বেলাল হোসেনের মৃত্যু হয়।

এ দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ আরও পাঁচ জেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তারা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এসব জেলের বাড়ি রামগতি উপজেলার চরগাজী ও চররমিজ ইউনিয়নে। জেলেদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চরলক্ষ্মী গ্রামের মো. আলাউদ্দিন, মো. সাহাবউদ্দিন, আবু জাহের, মো. মিরাজ উদ্দিন ও মো. মিরাজ। পাশাপাশি চরলক্ষ্মী গ্রামের আবদুর জাহেরের ছেলে মেহরাজ অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন। আবদুর জাহেরের আরেক ছেলে মিলন একই ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বিস্ফোরণে আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসা চরলক্ষ্মী গ্রামের মো. শরীফ বলেন, মেঘনায় মাছ ধরা নিষেধ। এজন্য ২১ জেলে কক্সবাজারে গিয়ে সোহেল কোম্পানির ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রলার চালিয়েছি। ২৭ ফেব্রুয়ারি সাগরে জাল ফেলি। মধ্যরাতে ট্রলারে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরপর দুটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন সাগরে পড়ে যাই। কয়েকজন কেবিনে এলোপাতাড়ি পড়ে থাকে। ট্রলারে থাকা একজন সাগরে পড়ে যাওয়া জেলেদের রশি দিয়ে উদ্ধার করে। যারা ট্রলারে ছিল দগ্ধ হয়। ঘণ্টাখানিক পর অন্য একটি মাছ ধরার ট্রলার আমাদের উদ্ধার করে। তিন ঘণ্টা পর নেটওয়ার্ক এলাকায় নিয়ে যায়। বিষয়টি ট্রলারমালিক সোহেলকে জানালে স্পিডবোট পাঠিয়ে আমাদের কক্সবাজারে নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১২ জেলেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অগ্নিদগ্ধরা টাকার অভাবে বাড়িতে ফিরে আসেন। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ তাদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে।

আহত জেলেদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’

২ মার্চ ১২ জেলেকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি রোগীদের সেবায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত, চিকিৎসা ও খরচের অর্থ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাতে দুই, শনিবার বিকেলে এক, সোমবার বিকেলে এক, মঙ্গলবার রাতে এক এবং বুধবার বিকেলে আরও এক জেলের মৃত্যু হয়। 

আহত শরীফ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে দেখলাম ইঞ্জিনের কিছুই হয়নি। গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ঠিক ছিল। ট্রলারও ঠিক ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনাটি রহস্যজনক। বিকট শব্দ কিসের ছিল তা আমরা বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে ভর্তির পর ট্রলারমালিক সোহেল আমাদের খোঁজখবর নেননি।

‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, অর্থের অভাবে অগ্নিদগ্ধ জেলেদের চিকিৎসা হচ্ছিল না। পরে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জন মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মারা যাওয়া জেলে ও চিকিৎসাধীনদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।

রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঢাকায় হাসপাতালে আছি। মৃত ও আহত জেলেদের চিকিৎসাসহ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল মোমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাসহ নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। তবে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে কক্সবাজার সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে কি কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে তদন্তের পর জানা যাবে।

এএম