চিকিৎসা বন্ধ কাঠমিস্ত্রি সুলতানের
কাঠমিস্ত্রি সুলতান ইসলাম
টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না কাঠমিস্ত্রি সুলতান ইসলাম। ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনিস্টিটিউটে ভর্তি হয়েও ফিরে এসেছেন তিনি। এখন মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য তার অনেক টাকা প্রয়োজন। অভাব অনটনের সংসারে উপার্জন করার কেউ না থাকায় নিরুপায় হয়ে পড়েছেন সুলতান।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম গ্রামে থাকেন পঞ্চাশোর্ধ্ব সুলতান ইসলাম। বৃদ্ধ মা-বাবা আর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুলতানের সংসার। তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মুদি দোকানে কাজ করেন। আরেক ছেলে শাহ্জালাল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। সবার ছোট ছেলে শাহ্ পরাণের বয়স সাড়ে চার বছর।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সুলতান ইসলাম। কিছুদিন আগে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ বিদ্যুতায়িত পিঠ পুড়ে গেছে তার। এরপর থেকে চিকিৎসা করতে গিয়ে সব শেষ করে ফেলেছে পরিবারের লোকজন। বর্তমানে উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় চরম কষ্টে দিন কাটছে তার পরিবারের। বন্ধ হয়ে আছে সুলতানের চিকিৎসাও।
সুলতান ইসলাম এখন ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে তার। কোথাও আবার ক্ষত শুকিয়ে পড়েছে টান। এমন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার আশায় শুয়ে শুয়ে যন্ত্রণাময় একেকটা দিন কাটছে সুলতানের। আর পরিবারের সদস্যরা অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা পেতে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
সুলতানের স্ত্রী শাহজাদী বেগম ঢাকা পোস্টকে জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পীরগাছায় একটি বাড়িতে কাজ করার সময় বাঁশ দিয়ে টাঙানো বিদ্যুতের তারে আকস্মিকভাবে জড়িয়ে গুরুত্বর আহত হন তার স্বামী। ঘটনায় পিঠ, হাত-পা মারাত্বকভাবে পুড়ে গেছে। ওই অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সুলতানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। সেখানে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার পর আর চিকিৎসার ব্যয়ভার সামলাতে না পেরে ক্ষত নিয়েই বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় সুলতানকে। এখন দিনদিন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সুলতান ইসলামের বড় ছেলে শরিফুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, এখন তার বাবার চিকিৎসার জন্য যে টাকা প্রয়োজন সেই টাকা তাদের কাছে নেই। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এখন এলাকায় সবার কাছে টাকা সংগ্রহ করে চিকিৎসা চলছে তার। বাবাকে বাঁচাতে সমাজের বৃত্তবানদের সহায়তাসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
স্থানীয় পীরগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমি সুলতানের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। কয়েকদিন আগেও ওষুধ কেনার জন্য কিছু টাকা দিয়ে এসেছি। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর সুলতানের পরিবারকে দিয়ে একটি আবেদন করিয়েছি। সবাই এগিয়ে এলে চিকিৎসার জন্য অর্থের ব্যবস্থা হবে।
কাঠমিস্ত্রি সুলতান ইসলামের চিকিৎসার জন্য কেউ সহায়তা করতে চাইলে তার বড় ছেলে শরিফুল ইসলামের ব্যক্তিগত বিকাশ (০১৮৬৬৬৫১১১৫) নম্বরে যোগাযোগ করতে পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস