জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিতে গিয়ে সামনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই গ্রুপের কমপক্ষে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটির ফুল দেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ নেতারা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে তড়িঘড়ি করে ম্যুরালে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এদিকে এই ঘটনায় রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুল ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবলুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিতে যান। এসময় সামনে থাকাকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি থেকে সংঘর্ষ বেধে যায়।

এসময় তড়িঘড়ি করে আওয়ামী লীগের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ রংপুর জিলা স্কুলের মাঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেখানে উপস্থিত সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ ঘটনায় দুইপক্ষের অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন নেতারা। আহতদের মধ্যে পীরগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল নাহিয়ান অভিকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে আহত ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান অভি বলেন, নবগঠিত জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ দলের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিতে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী সামনে এগিয়ে গেলে আমাদের বাধা দেয়। এসময় আমি প্রতিবাদ করলে আমার মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি লাথি ও ঘুষি মেরে আমাকে গুরুতর আহত করা হয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাব্বির আহমেদ বলেন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রনির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হন। আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার প্রতিপক্ষরা ছোট ঘটনাটিকে বড় করে সাজাতেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যেহেতু ফুল দিতে প্রচুর নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন, সে কারণে সামনে যাওয়ার তাড়া ছিল সবারই।

এ ঘটনার পর নবগঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও নেতাকর্মীরা সরাসরি নগরীর বেতপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধাা ইলিয়াস আহম্মেদ, মোতাহার হোসেন মওলা, রোজি রহমান, উৎপল সরকার প্রমুখ। সভায় জেলা আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান নতুন নেতৃত্ব। তবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া পরাজিত হন। এই নির্বাচনে তিনি জামানতও হারান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১ জানুয়ারি) রাতে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ