দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে এক প্রসূতি মা সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন। পাঁচ দিন পর ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে দুই-তিন দিন পরে পেটে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। ব্যথার কারণ জানতে ওই ক্লিনিকে ফোন করলে তারা আবার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। 

প্রসূতি মা ক্লিনিকে ভর্তি না হয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি হন। পরে চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখেন পেটে ময়লার মতো কিছু জমে রয়েছে। পরে অস্ত্রোপচার করে পেটের ভেতর থেকে বের করা হয় সিজারের সময় রক্ত মোছার কাজে ব্যবহৃত তোয়ালে। 

ভুক্তভোগী প্রসূতির নাম মুক্তা বেগম (২৫)। তিনি খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া ইউনিয়নের মারগাও গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী। গত ২৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার পেটের ভেতর থেকে তোয়ালে অপসারণ করা হয়। ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। বর্তমানে সন্তানসহ সুস্থ আছেন মুক্তা।

আরও পড়ুন >>> জীবন নিয়ে খেলা! 

মুক্তা বেগম বলেন, গত ৩০ নভেম্বর সিজারের মাধ্যমে রানীরবন্দর ক্লিনিকে আমার ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ক্লিনিকে পাঁচ দিন থাকার পর বাসায় ফিরে দুই-তিন দিন কোনো ব্যথা ছিল না। পরে হঠাৎ করে পেটের ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা কিছুতেই কমছিল না। পরে ক্লিনিকে ফোন করে ব্যথার কারণ জানতে চাইলে তারা আবার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। তখন আমার স্বামী বলে ক্লিনিকে ভর্তি হলে আবার অনেক টাকা লাগবে। এত টাকা কই পাব। তখন আমাকে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে ডাক্তার পরীক্ষা করে বলে পেটের মধ্যে কিছু আছে। এটা অপারেশন করতে হবে। না হলে ব্যথা কমবে না। পরে অপারেশন করার পর পেটের ভেতর থেকে ময়লাগুলো বের করেন ডাক্তার। অপারেশন করার পর সুস্থ আছি পেটের ব্যথা নেই। 

তিনি আরও বলেন,সিজারের সময় একটি টাকাও কম নেয়নি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আমার স্বামী কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে ক্লিনিকের বিল মিটিয়েছে। আবার পেটের ভেতর কাপড় রেখে সেলাই করে দিয়েছে।

ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর উপজেলার রানীরবন্দর বাজারের রানীরবন্দর ক্লিনিক  অ্যান্ড হাসপাতালে প্রসূতি মায়ের সিজার করেন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রবিউল আলম। সিজার করার সময় ভুলে তিনি তোয়ালে পেটের ভেতর রেখে সেলাই করেন।

দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মুক্তা বেগমের অস্ত্রোপচার করেছেন হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় আমরা হাত মোছার কাজে ছোট আকৃতির তোয়ালে ব্যবহার করি। ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় মাব। অস্ত্রোপচারের সময় মাবগুলো গুনে নেওয়া হয়। আবার অস্ত্রোপচার শেষ হলে গুনে নেন নার্সরা। অসাবধানবশত হয়তো সেলাই করার সময় পেটের ভেতর একটি মাব থেকে গেছে। আমারা আলট্রামনোগ্রাম করে পেটে ময়লার মতো কিছু একটা আছে বুঝতে পারি। পরে অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই রোগী বাসায় আছেন। তিনি শঙ্কামুক্ত।

আরও পড়ুন >>> অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক সিলগালা : বেটার লেট দ্যান নেভার 

রানীরবন্দর ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক রেজা ইসলাম বলেন, ডাক্তারের অসাবধানতায় ঘটনাটি ঘটেছে। রোগী আমার এখান থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর তার পেটের ব্যথার কথা জানতে পারি। রোগীকে আবার ভর্তি হওয়ার জন্য বলেছিলাম। তারা আর কোনো যোগাযোগ না করে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। পরে খবর নিয়েছি রোগী এখন ভালো আছে। 

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, রানীরবন্দরের ওই ক্লিনিকের ঘটনাটি জেনেছি। ভুক্তভোগীকে অভিযোগও করতে বলা হয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কোনো কারণে ওই পরিবারটি লিখিত অভিযোগ করেনি। রানীরবন্দর ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে রানীরবন্দর ক্লিনিক নামে নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে আবার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।

ইমরান আলী সোহাগ/আরএআর