গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের দাইপাড়া এলাকা থেকে মা রুবিনা (২২) ও ছেলে জিহাদের (৪) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্বামী ঝুমনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা পুলিশ বলতে পারেনি।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের দাইপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে রুবিনা ও জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত রুবিনা শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের সিরাজ মিয়ার মেয়ে। রুবিনার স্বামী ঝুমন শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের রঙ্গিলা বাজার এলাকায় মায়ের সঙ্গে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে কাজ করতেন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর থানায়।

মরদেহ দুটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আনিছুর আশেকীন। তিনি জানান, মা-ছেলের মরদেহ দুটি একে অপরকে জড়িয়ে ছিল। দুটি মরদেহ গলে গিয়েছে, তুলনামূলকভাবে মায়ের চেয়ে ছেলের মরদেহ বেশি গলে গিয়েছে। তবে তাদের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধে হত্যার কোনো চিহ্নও মেলেনি।

মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, বাবার দেওয়া বাড়িতে সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন রুবিনা। গত তিন-চার দিন মা-ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। তাদের ঘর ও বাড়ির গেইট বাহির থেকে তালাবদ্ধ ছিল। শনিবার বিকেলে তালাবদ্ধ ঘরের দরজা তার বোন সেলিনা ভেঙে মা-ছেলের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। 

তিনি আরও জানান, এটা হত্যা বা আত্মহত্যাও হতে পারে। এছাড়া ঘরের ভেতরে একটি হাজী বিরিয়ানির প্যাকেট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাহির থেকে খাবার এনে তারা খেয়েছে। খাওয়ার পর আত্মহত্যা করতে পারে অথবা কোনো দুর্বৃত্তের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। তবে মরদেহ দুটি গলিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।

নিহত রুবিনার বোন সেলিনা আকতার বলেন, রুবিনার স্বামী ঝুমনের পূর্বের সংসারে একটি মেয়ে আছে। পাঁচ-ছয় বছর আগে আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রুবিনাকে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করে ঝুমন। মাস ছয়েক আগে ভাতিজির বিয়েতে স্বর্ণের চুড়ি উপহার দেয় রুবিনার স্বামী ঝুমন। কিন্তু ছেলের জন্মের পর তাকে কোনো ধরনের উপহার না দেওয়ায় ঝুমনের সঙ্গে রুবিনার ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রুবিনাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় ঝুমন। এরপর থেকে ঝুমনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মাঝে মধ্যে ছেলের খোঁজখবর নিতে ঝুমন রুবিনার বাড়িতে আসতো। তবে স্বামী তাকে হত্যা করেছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা রইছ উদ্দিন জানান, রুবিনা বা তার পরিবারের সঙ্গে কারও কোনো সমস্যা বা ঝগড়া হয়নি। তাদের পরিবার খুবই শান্ত প্রকৃতির। স্বামীর সঙ্গে কোনো বিরোধ না অন্য কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি এটি আত্মহত্যা- এর রহস্য উদঘাটন জরুরি। কারণ এ এলাকায় আগে কখনো এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।

ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য জানতে ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। রুবিনার স্বামী ঝুমনকে আটক করে শ্রীপুর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুর পিবিআইয়ের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। 

শিহাব খান/আরএআর