লামিয়া খাতুন

আশ্রয় চেয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন লামিয়া খাতুন (১৩) নামের এক কিশোরী। কিশোরীর এমন আবেদনের পরে বিষয়টি ‘ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) সমাজসেবা জরুরি আলোচনা প্রয়োজন’ লেখে স্বাক্ষর করেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। এর আগে সোমবার (৯ জানুয়ারি) লামিয়া খাতুন ‘আশ্রয়ের জন্য আবেদন’ উল্লেখ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দেন।

রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোছা. হাসিনা মমতাজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘লামিয়া বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।

কিশোরী দরখাস্তে লিখেছেন, ‘তার নাম লামিয়া খাতুন। বাবা খোকন হোসেন ও রেখা বিবি। তাদের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা-মা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছে। মা নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ আমাকে (লামিয়া) আশ্রয় দিতে রাজি নয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নানির বাসায় থাকছিলাম। কিন্তু ৫ মাস পূর্বে আমার নানি গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য আমাকে রেখে যায়। সেখানে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।  

আমাকে প্রায় সময় ইজ্জতহানীর চেষ্টা ও গায়ে হাত দেয়। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি অবস্থায় আছি। আমাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আমি গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চাই না। যদি জোরপূর্বকভাবে নিয়ে যায় তাহলে আমার জীবননাশের হুমকি আছে। এমতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল হতে নিরাপদস্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোছা. হাসিনা মমতাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, লামিয়া জানিয়েছে সে গোলাম কবির নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে থাকতেন। গোলাম কবির নগরীর একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলে শুনেছি। তবে কোন কলেজের শিক্ষক সেটা জানা নেই আমার।

তিনি আরও বলেন, আজ ১২টার পরে আমরা খবর পাই। এরপরে রামেক হাসপাতালে ছুটে যাই। দেরি হলে হয়তো মেয়েটাকে তারা নিয়ে চলে যেতো। আমরা আসায় তারা মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। মেয়েটির কথার সত্যতা মিলেছে। মেয়েটিকে দেখে আমাদের মনে হয়েছে খুব ভয় পেয়েছে। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছে। রামেকে চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে আমাদের হেফাজতে নেব। আর তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করব। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে লামিয়া আর কোনোভাবেই যেতে চায় না গোলাম কবিরের বাড়িতে।

গোলাম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অসুস্থ লামিয়া খাতুনের থেকে মুফোফোন নম্বর নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরকে