পাখির জন্য খাঁচা হাতে দুটি সংগঠনের সদস্যরা

কুষ্টিয়ায় পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মানুষ মানুষের জন্য ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাব নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পাখিদের অভয়ারণ্য গড়তে শহরের প্রতিটি গাছে বাঁশের ঝুড়ি বেঁধে দিয়েছে তারা।

বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে শহরের কয়েকটি গাছে পাখির বাসা হিসেবে বাঁশের ঝুড়ি স্থাপনের মাধ্যমে চলতি বছরের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২ বছর ধরে মানবিক ও ব্যতিক্রমী এই কাজ করে আসছে তারা।

এ বছর প্রায় শতাধিক ঝুড়ি স্থাপনের কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন দুটি। সে অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন জায়গায় সহস্রাধিক বাসা স্থাপন করা হবে। কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি পাখি গবেষক এসআই সোহেল ও মানুষ মানুষের জন্য (কুষ্টিয়া) নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক শাহাবউদ্দিন মিলন এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সোহেল ও মিলন দুজনই মানবিক মানুষ। তারা বহু বছর ধরে পশুপাখিদের নিয়ে কাজ করে আসছেন। পাখিদের থাকার জন্য গাছে গাছে বাসা স্থাপন করে দেন প্রতিবছর। পাখিদের খাবার খেতে দেন। শহরের সবার কাছে সুমন ও মিলন পশুপাখির বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাখি। আগে গ্রামে গ্রামে হরহামেশা দেখা মিলত নানা প্রজাতির পাখির। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব, শিকারি ও কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পাখির নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত, পাখি নিধন রোধ ও পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে গাছে গাছে বাঁশের তৈরি কৃত্রিম ঝুড়ি বেঁধে সবাইকে সচেতন করছে মানুষ মানুষের জন্য কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাব।

পাখির জন্য গাছে খাঁচা বাঁধা হচ্ছে

কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি পাখি গবেষক এসআই সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৃতি বেঁচে থাকলে মানুষ বাঁচবে। এ জন্য প্রকৃতি রক্ষা করা সবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কুষ্টিয়ায় শহর বা গ্রাম এলাকায় আগের মতো পাখি দেখা যায় না। বিভিন্ন সময় শিকারিরা পাখি শিকার করায় দিন দিন দেশীয় প্রজাতি বা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই তাদের সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে বিভিন্ন গাছে মাটির হাঁড়ির বাসা স্থাপন করছি আমরা। পর্যায়ক্রমে শহর থেকে গ্রামে পাখির জন্য বাসা স্থাপন করা হবে।

মানুষ মানুষের জন্য সংগঠনের পরিচালক শাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, পাখিদের মুক্তভাবে বাঁচার জন্য পুকুর ভরাট, গাছনিধন, শিকার বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। আমাদের দেশে বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পাখিরা বাসা বাঁধার স্থান পাচ্ছে না। এ সময় পাখিদের ডিম দেওয়ার সময়, কিন্তু বড় বড় গাছ না থাকায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তাই প্রকৃতির সন্তানদের রক্ষা করতে আমরা পাখির বাসা বাঁধা শুরু করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানুষ মানুষের জন্য সংগঠনের পরিচালক শাহাবউদ্দিন মিলন, কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি পাখি গবেষক এস আই সোহেল, কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা ডেপুটি কমিশনার উত্তম বিশ্বাস, মানুষ মানুষের জন্য কুষ্টিয়ার সদস্য ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক নাব্বির আল নাফিজ প্রমুখ।

রাজু আহমেদ/এনএ